তাজমহলের নোংরা ইতিহাস। A Bad History of Tajmahal

সম্রাট শাহজাহান তখন টগবগে কুড়ি বছরের যুবক। এক দিন আগ্রার বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক সুন্দরী মেয়েকে দেখে তার ভাল লেগে যায়। মেয়েটির নাম ছিল আরজুমান্দ বানু বেগম। সম্রাট শাহজাহান মনে মনে ঠিক করে ফেলেন এই মেয়েটিকে তিনি বিয়ে করবেন। পরে ১৬১২ সালের ১০ ই মে। আরজুমান্দ বানু বেগম কে বিয়ে করেন সম্রাট শাহজাহান। এর আগে সম্রাট শাহজাহান রাজনৈতিক কারণে পারস্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু মমতাজ বেগমই ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী। আরজুমান্দ বানু  বেগমের নামেই মমতাজ মহল। সম্রাট শাহজাহান তাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে এই নাম দিয়েছিলেন।

আমাদের সর্বশেষ আপডেট পেতে  Google NewsFollow করুন

মমতাজ মহল মাত্র 39 বছর বেঁচে ছিলেন আর তাদের বিবাহিত জীবন ছিল মাত্র 19 বছর। এই স্বল্প সময়েই তিনি চৌদ্দটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, আর ১৪ তম সন্তানের জন্মের সময় তিনি ১৬৩১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মমতাজ মহলের এই অকাল মৃত্যুতে সম্রাট শাহজাহান খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি এতটাই কষ্ট পেয়েছিলেন যে, প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত কোন দানা পানিও মুখে দেননি। এই সাতটি দিন তিনি ঘরের ভিতরেই ছিলেন। অবশেষে তিনি যখন বাইরে বের হলেন তখন তাকে চিনতে অনেকেরই খুব কষ্ট হচ্ছিল, কারন তার চুলের রং ধূসর হয়ে গিয়েছিল এবং মুখ হয়ে গিয়েছিল ফ্যাকাশে। শেষ পর্যন্ত সম্রাট শাহজাহান তাজমহল বানালেন। তার স্ত্রীর ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

মমতাজ শাহজাহানের কয় নাম্বার স্ত্রী ছিলেন ?

সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনী যতটা আলোচিত ঠিক ততটাই সমালোচিত। মমতাজ বেগম ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী। কোথাও বলা রয়েছে মমতাজ শাহজাহানের তৃতীয় স্ত্রী, কোথাও বলা রয়েছে ৪র্থ স্ত্রী। আসলে মমতাজ যে শাহজাহানের কয় নাম্বার স্থ্রী ছিলেন তা নিয়ে 

শাহজাহান ও মমতাজের বিতর্কিত প্রেমঃ

সম্রাট শাহজাহানের সঙ্গে মমতাজের বিয়ে হওয়ার আগেও নাকি মমতাজের আরেকটি বিয়ে হয়েছিল সম্রাট শাহজাহান নাকি স্বামীকে হত্যা করে তারপর মমতাজকে বিয়ে করেছিল। মমতাজকে বিয়ে করার আগে সম্রাট শাহজাহানের নাকি আরো একটি স্ত্রী ছিল এবং মমতাজ মারা যাওয়ার পরেও নাকি সম্রাট শাহজাহান আরো একটি বিয়ে করেছিলেন। এমনকি মমতাজ বেগম মারা যাওয়ার পরেই সম্রাট শাহজাহান নাকি মমতাজের আপন ছোট বোনকে বিয়ে করেন।

আমাদের সর্বশেষ আপডেট পেতে  Google NewsFollow করুন

ইশা মোহাম্মদ নামে একজন লোক নাকি তার স্ত্রীকে  উপহার দেওয়ার জন্য একটি ভাস্কর্য বানায়। শাহজাহানের সেই ভাস্কর্যটি পছন্দ হয়ে যায় এবং সেই ডিজাইন অনুযায়ী নাকি তাজমহল বানানো হয়

এবং তাজমহল বানানোর পর সেই ব্যক্তির দুটি চোখই নষ্ট করে দেওয়া হয় যেন কখনো তিনি নতুন করে আর এরকম কিছু বানাতে না পারেন।

তাজমহল নির্মান সম্পর্কিত বিতর্কিত তথ্য

তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় মমতাজ মারা যাওয়ার এক বছর পর, ১৬৩২ সালে।ত জমহল নির্মানের জমিটি নাকি রাজা জয় সিংয়ের কাছ থেকে মধ্য আগ্রার একটি রাজপ্রাসাদের বিনিময়ের সম্রাট শাহজাহান ক্রয় করেছিলেন।এই তাজমহল নির্মাণের জন্য কাজ করেছিলেন প্রায় 20 হাজার শ্রমিক। মমতাজের মৃত্যুর 17 বছর পর ১৬৪৮ সালে তাজমহলের গম্বুজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু তাজমহলের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয় ১৬৫৩ সালে।

এই তাজমহলের নির্মাণের কাজে ১০০০০ হাতিও শ্রম দিয়েছিল। এই হাতিগুলোকে নির্মাণের কাজে ব্যবহূত মার্বেল পাথর বহন করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। তাজের মাথার ত্রিশুলটি নাকি করা হয়েছে হিন্দুদের শিব মন্দিরের অনুকরন করে।

তাজমহলের উচ্চতা ১৮০ ফুট। এর প্রধান গম্বুজ টির উচ্চতা ২১৩ ফুট এবং চওড়া ৬০ ফুট। চারটি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট।সম্পূর্ণ কমপ্লেক্সটির আয়তন ১৯০২×১০০২ ফুট।শুধু তাজমহলটি ১৮৬ বর্গ ফুট যা সম্পূর্ণ মার্বেল পাথরের উপর নির্মিত।

তাজমহলের নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত মার্বেল পাথর গুলো বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছি।  চীন দেশ থেকে আনা হয়েছিল সবুজ পাথর। তিব্বত থেকে আনা হয়েছিল স্বচ্ছ নীল পাথর এবং শ্রীলঙ্কা থেকে নীলমণি পাথর আনা হয়েছিল। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তান পারস্য সহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৮ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে এই অনন্য স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

তাজমহল নির্মানের জন্য তৎকালীন সময়ে আনুমানিক 22 মিলিয়ন বা 1 লাখ মার্কিন ডলার খরচ করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। কিন্তু তাজমহলের নির্মানে শ্রমিকের খরচ নির্মাণের দির্ঘ সময়  এবং ভিন্ন অর্থনীতির যুগের কারণে এর মূল্য অনেক এবং একে অমূল্য বলা হয়। তাজমহলের ভিতটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যা কোনো  প্রাকৃতিক  বিপর্যয়েও  ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

প্রফেসর পিএন অক তার "তাজমহল দ্যা ট্রু স্টোরি" বই তে দাবি করেন, তাজমহল মমতাজের সম্মানে নির্মাণ করা কোন সমাধিস্থল নয় , এটি ছিল হিন্দু দেবতা শিবের মন্দির ছিল।যার নাম ছিল "তেজ মহালয়"।মন্দিরে শুধুমাত্র আগ্রার রাজপুত্ররা পূজা করতে পারত। তাই সাধারণ মানুষের কাছে এই মন্দিরটি তেমন একটাপ রিচিত ছিল না।


আর তেজ মহালয় থেকেই নাকি তাজমহল এর নামকরণ করা হয়েছে। পি এন ওক দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান নাকি রাজা জয়সিংহের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে শিব মন্দিরটি দখল করে নিয়ে পরবর্তীতে নাম রাখেন তাজমহল। তাজমহলের নামকরণ করা হয় মমতাজ মহলের নাম অনুসারে। এই বিষয়টিও পি এন ওক  মেনে নিতে চান না। তিনি বলেন সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রীর প্রকৃত নাম কখনোই মমতাজ ছিল না।

 লেখা এই বইটি তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার নতুন করে প্রকাশ করা বন্ধ করে দেন এবং বাজারে যে কপিগুলো ছিল সেগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নেন। তিনি মনে করেন এই বইটির কারনে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংঘাত বাধতে পারে। 
 
আমাদের সর্বশেষ আপডেট পেতে  Google NewsFollow করুন

পরিশেষে ,

তর্ক-বিতর্ক যতই থাকুক তবু তাজমহল মুসলিম স্থাপত্য কীর্তি গুলোর মধ্যে গৌরবান্বিত একটি অলংকার, একটি অনন্য স্থাপনা। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি আশ্চর্য। যা মুসলমানদের গৌরবান্বিত ইতিহাস বহন করে।
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url