কেমন আছে এরশাদ শিকদারের সুন্দরী ত্রীরা !! কেমন আছে তার স্বর্ণকমল
কেমন আছে এরশাদ শিকদারের স্ত্রীরা !! কেমন আছে তার স্বর্ণকমল
এরশাদ শিকদার যার পুরো নাম এরশাদ আলী শিকদার। তার নামে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলাসহ আরো প্রায় ৩২ টি মামলা ছিল। যার ফলস্বরূপ ২০০৪ সালের ১০ ই মে ১২টা ১ মিনিটে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি হয়তো আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু আমাদের মাঝে রয়েছে তার সেই বিলাসবহুল বাড়িটি "স্বর্ণকমল"। এরশাদ শিকদার একজন জঘন্য প্রকৃতির সিরিয়াল খুনী হওয়া সত্বেও তার তৈরি করা স্বর্ণকমল বাড়ি টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক কৌতুহল ছিল।
এরশাদ শিকদার মারা যাবার সাথে সাথেই যেন স্বর্ণকমল সম্পর্কে মানুষের আগ্রহও কমে গেছে। তবুও সেই বিলাসবহুল বাড়িটি দেখলেই যেন মনে পড়ে যায় ভয়ানক একজন জঘন্য, দুর্ধর্ ঠান্ডা মাথার খুনি এরশাদ শিকদারের কথা। এরশাদ শিকদার এতটাই স্বৈরাচারী ছিলেন যে, তার মুখের উপরে কেউ কথা বলতে পারতো না। তার অত্যাচারে এলাকার সবাই প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করতেন। তিনি এতটাই নির্মম দুর্ধর্ষ বর্বর প্রকৃতির ছিলেন।

কথিত আছে যে, এরশাদ শিকদারের বিলাসবহুল বাড়ি স্বর্ণকমল যে বানিয়েছিল তাকেও নির্মমভাবে মরতে হয়েছিল এই ভয়ানক খুনি এরশাদ শিকদারের হাতে। তার অপরাধ ছিল, এই বাড়িটি বানানোর সময় কিছু অংশ ঢুকে গিয়েছিল অন্যের জমির ভিতরে। একটি গোপন সূত্র থেকে জানা যায় যে, এরশাদ শিকদার যখন জীবিত ছিলেন তখন অবৈধ উপায়ে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছিলেন। মাগিবাজী, ছিনতাই,খুন,ডাকাতি, চাঁদাবাজি, চোরাচালানি, ভূমি জবরদখল সহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করতেন না।এই অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা তিনি ব্যাংকে রাখার পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের দাদন ব্যবসা, সুদের ব্যবসা,জমি ক্রয় বিক্রয় ও বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ধার দিয়ে তাদের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখত। আর এই অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়েই তিনি এই বিলাসবহুল বাড়ি স্বর্ণ কমল তৈরি করেছিলেন।
প্রচুর টাকার মালিক হওয়ার কারণে এরশাদ শিকদার ও তার পরিবারের লোকজনেরা খুবই বিলাসী হয়ে উঠেছিল। বিলাসবহুল এই স্বর্ণ কমল দুই তলা বিশিষ্ট বাড়িতে বসবাস করত এরশাদ শিকদারের দুই স্ত্রী খোদেজা বেগম ও সানজিদা নাহার শোভা, তাদের তিন ছেলে জামাল,কামাল,হেলাল ও একমাত্র মেয়ে সুবর্ণ ইয়াসমিন স্বাদ। বাড়ির নিচতলায় থাকেন তাঁর ছোট স্ত্রী শোভা আর দোতলায় থাকেন তার আরেক স্ত্রী খোদেজা বেগম,তার মা ও ছেলে মেয়েরা। এরশাদ শিকদার দুই স্ত্রীর নামেই ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন। কারণ তিনি বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাহিরে থাকতেন। স্ত্রীদের যেন চলাফেরা করতে বা সংসার চালাতে কোন কষ্ট না হয় সেজন্য তিনি তাদের নামে ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন। কোনো কিছুরই অভাব ছিল না তাদের। খুব ভাল ভাবেই আরাম আয়েশেই দিন যাপিন করছিল স্বর্নকমলের বাসিন্দারা।
এরশাদ শিকদার মারা যাওয়ার পরেও বেশ কিছু দিন তারা এই স্বর্ণকমলেই একসাথেই ছিলেন। এরশাদ শিকদারের মৃত্যুর পরেই তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ বাড়তে থাকে। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে স্বর্ণকমলের ভাগাভাগির অংশ নিয়ে দ্বন্দ্ব। জানা যায় এরশাদ শিকদারের ভাই-বোনেরাও নাকি তখন স্বর্ণ কম্বলের অংশ দাবি করে, অবশ্য পরে তারা তাদের দাবি ফিরিয়ে নেয়। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ শিকদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তখন এরশাদ শিকদার ও তার স্ত্রীদের নামে থাকা সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট সরকার বন্ধ করে দেয়।
এরশাদ শিকদারের ফাঁসি হওয়ার পরেই তার প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগম আরেকটি বিয়ে করেন। জানা যায়, এরশাদ শিকদারের বডিগার্ড জাহাজী মতিকে বিয়ে করে ঢাকায় কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় খোদেজা বেগম । এরশাদ শিকদারের ছোট স্থ্রী শোভাও ঢাকায় গিয়ে একটি বিউটি পার্লার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু এরশাদ শিকদারের ছেলেরা থেকে যায় সেই স্বর্ণকমল বাড়িতেই। এরশাদ শিকদারের কারণে বাহিরের মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল ন, যার কারণে তাদের খুব অর্থকষ্টে পড়তে হয়।
এরশাদ শিকদারের গ্রামের বাড়ি ছিল বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মাদার ঘোনা গ্রামে। এরশাদ শিকদারের বাবার নাম ছিল বন্দে আলী শিকদার। তিনি ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। তার মা গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেন। এরশাদ শিকদার ছিলেন তার ৮ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তাদের সংসারে তখন অভাব-অনটন লেগেই থাকত। তাই তিনি ৭/৮ বছর বয়সের দিকে খুলনায় চলে আসে। খুলনা ঘাট এলাকায় সে কুলির কাজ করতো। কুলির কাজ করতে গিয়ে তার চুরি করার অভ্যাস গড়ে ওঠ। সেখানে সে সরকারী কার্গো ও ট্রেন থেকে চাল,গম,কাঠ,রেল লাইনের পাতি সহ বিভিন্ন জিনিস চুরি করা শুরু করে। চুরি করতে গিয়ে বহুবার তিনি মানুষের হাতে ধরা খা, কিন্তু চুরি করা ছেড়ে দেননি।
এরশাদ শিকদার ছিলেন খুবই ফর্সা চেহারার। চুরি করতে করতে একসময় তিনি চোরদের সর্দার হয়ে ওঠেন। সবাই তার নাম রাখে "রাঙ্গা চোর"। আস্তে আস্তে তার চুরি করার এলাকা বাড়তে থাকে। ।চুরি করা মালামাল বিক্রি করে এক সময় তিনি মোটামুটি ভালো পরিমাণের টাকা জমা করে ফেলেন এবং তা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ।
তখন সময়টা ছিল ১৯৭৪ সাল। তখন এরশাদ শিকদার কে ব্যবসা করতে সাহায্য করেন তার আপন বড় ভাই আশরাফ আলী। তিনি এরশাদ শিকদার কে একটি ট্রলার ও ২২ টি জাল দেন মাছের ব্যবসা করার জন্য। তখন তার ব্যবসা খুব ভালোই চলছিল। তিনি ব্যবসা করার পাশাপাশি চুরির কাজও ঠিক মত চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈধ অবৈধ ব্যবসা করতে করতে একসময় তিনি বিপুল টাকা ও অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন। ১৯৯৬ সালে তিনি খুলনার মাজিদ সরনীতে বাড়ি করার জন্য ৬ কাঠা জমি কেনেন। যার মূল্য ছিল তখনকার সময়ে ৩৫ লাখ টাকা। সেই জমির উপরে তৈরি করা হয় এই বিলাসবহুল বাড়ি "স্বর্ণকমল"। এই বিলাসবহুল বাড়িটি বানানোর জন্য সমস্ত মালামাল এরশাদ শিকদার ভারত থেকে আনিয়েছিলেন। দোতালায় ওঠার জন্য এই বাড়ির ভেতরে রয়েছে একটি প্যাচানো সিড়ি।
দোতালায় আরো একটি গোপন সিঁড়ি রয়েছে, এরশাদ শিকদার এটিকে পালানোর কাজে ব্যবহার করতেন। সিঁড়িগুলোতে দেশী বিদেশী দামী দামী সব কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করা হয়েছিল। দামি দামি সব আসবাবপত্র ও শোপিস দিয়ে এই পুরো বাড়ির ঘরগুলো সাজানো হয়েছিল। এরশাদ শিকদার দোতলায় লুকিয়ে থাকার জন্য একটি ব্যাংকার তৈরি করেছিলেন। জানা যায়, এরশাদ শিকদার বাড়ির ভিতরে ১০-১২ ফুটের একটি পুল বানিয়ে সেখানে মাগুর মাছ চাষ করত। কথিত আছে, মানুষকে খুন করার পর অনেককেই টুকরো টুকরো করে সেই মাগুর মাছ কে খেতে দিত। কি দুধর্ষ নির্মম কাহিন, শুনলেই। গায়ের পশম দাড়িয়ে যায় ।
এরশাদ শিকদার এই বাড়িটির নকশা করেছিলেন ভারতের কোন এক বিলাসবহুল বাড়ির নকশার অনুকরণে। এই বাড়িটি বানানোর কাজ যখন শেষ হয়েছিল তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসত এই বাড়িটাকে দেখার জন্য। এমনকি এই বাড়িটি কে দেখার জন্য বিদেশ থেকেও অনেক পর্যটক এসেছিল। মোট কথা এই বাড়িটি একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছিল তখন। তখনকার সময়ে এই "স্বর্ণকমল" বাড়িটি ছিল খুলনায় এলাকার সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ! এরশাদ শিকদার বেশিদিন এই বাড়িতে থাকতে পারেননি। যতদিন এরশাদ শিকদার বেঁচে ছিলেন ততদিন এই বাড়িতে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা থাকতো। এরশাদ শিকদারের মৃত্যুর পর তার দুই স্ত্রী ঢাকায় চলে যায়। কিন্তু সেই বিলাসবহুল স্বর্ণকমল বাড়িটিতে থেকে যায় শুধু জামালের স্ত্রী। জামাল ব্যবসায়ের কাজে বেশিরভাগ সময়ই ঢাকার বাইরে থাকেন। তিনি তার শশুরের সাথে জমা জমির ব্যবসা করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কামাল এই বাড়িটির সামনের একটি বাড়িতে থাকে।
এরশাদ শিকদার মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা খুবই অর্থ সংকটে পড়ে যায়। তাই তারা এই বাড়িটির দোতলার এক পাশে একটি মুরগির খামার এবং বাড়ির সামনে ফোন-ফ্যাক্সের দোকান দিয়েছিল। বর্তমানে কামাল যেই বাড়িতে থাকেন সেই চারতলা বিশিষ্ট বাড়িটির ভাড়া আদায় করে এবং বাজারে কয়েকটি দোকান ভাড়া দিয়ে ও ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এরশাদ শিকদারের ছোট ছেলে হেলাল বড়ো বাজারে ভাড়া দেয়া দোকান থেকে ভাড়া আদায় করে তার সংসার চালাচ্ছে বলে জানা যায়। শেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলছিল ভয়ানক ঠান্ডা খুনী, সিরিয়াল কিলার এরশাদ শিকদারের স্বর্ণকমল বাসিন্দাদের জীবন যাপন।
এখানে উল্লেখ্য যে, এরশাদ শিকদার কে ১৭ টি খুনের মামলার ছয়টিতে ফাঁসি ও পাঁচ টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে ছিলেন এরশাদ শিকদার, কিন্তু কোন লাভ হয়নি রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করেননি। তিনি ভেবেছিলেন তার অর্থ সম্পত্তি ও ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু শেষ অবধি তা হয়নি। অবশেষে ২০০৪ সালের ২০ ই মে রাত ১২ টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয় এরশাদ শিকদারের লাশ দাফন করা হয় টুটপাড়া কবর স্থানে।
taito mon holo ........