রাতের ঢাকা দেখতে কেমন লাগে
তবে বেশিরভাগ স্থানের দিনের চিরাচরিত রূপটি সন্ধ্যা নামলেই বদলে যায় যেন অন্য রকম এক রূপে। রাতে লাল-নীল বাতি সহ হরেক রঙের বর্ণিল আলোকসজ্জার মোহনীয় দৃশ্য নতুন এক উপস্থাপন করে রাজধানী ঢাকা শহর কে।
কারওয়ান বাজার, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, হাতিরঝিল, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, বিজয় সরণি, এয়ারপোর্ট মোড়সহ ঢাকার প্রায় সব পথেই রঙিন আলোর ছড়াছড়ি। সাথে শুনশান নীরবতা মুগ্ধ করবে যে কাউকে। কিন্তু রাতের নীরবতায় রাজধানীর সবাই ঘুমায় না। কেউ যখন দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয় অন্য কেউ তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের জগতে। এদের কারোটা বৈধ আবার কারোটা অবৈধ।
রাতের ঢাকায় যারা বৈধ কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শ্রমিক বা মজুর। কেউ আবার জীবিকার দায়ে বের হন রিকশা-সিএনজি বা অন্য কোনো বাহনকে সম্বল করে।
রাতে অবৈধ কাজেরই দৌরাত্ম্য বেশি দেখা যায়। সন্ধ্যার পর থেকেই চলে এ দলের প্রস্তুতি। সংখ্যায় কম হলেও রাত বাড়ার সাথে সাথে এদের তৎপরতা বাড়তে থাকে। এ দলে রয়েছে পতিতা, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও চোরা কারবারীরা।
স্থান ও সময় ভেদে এদের রূপ পরিবর্তন হয়। বদলে যায় অপরাধের ধরন ও কৌশল। রাজধানীতে কয়েক ধরনের পতিতা রয়েছে। এদের মধ্যে জায়গা ও স্থান ভেদে রয়েছে পার্থক্য।
সমাজে অবস্থানগত দিক থেকে রাজধানীতে দুই ধরনের পতিতা রয়েছে। একদল অবস্থান নেয় বিভিন্ন বাসা-বাড়ি বা আবাসিক হোটেলে। আরেক দল কাজ করে ভ্রাম্যমাণ রাস্তায় রাস্তায়।
যারা ভ্রাম্যমাণ তাদের মধ্যে আছে আবার তিনটি গ্রুপ। একটি গ্রুপ শুধুমাত্র পতিতাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। সমাজের ভেতরে এদের তেমন আনাগোনা নেই। এরা থাকে রাস্তার পাশে বা কোনো নিন্মমানের জায়গায়। সাধারণত বড় বড় শহরের বিভিন্ন রাস্তা, অলিগলি, শহরের বড় বড় উদ্যান, লেকের ধার, নানা ধরনের জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে খদ্দের সংগ্রহ করে এরা। যৌনকর্মীদের মধ্যে এ শ্রেণি সবচেয়ে নিম্নমানের।
ভ্রাম্যমাণ পতিতারা সাথে সবসময় পেতে দেয়ার মত কিছু বহন করে। খদ্দের সংগ্রহ করার পর একটু অন্ধকারে গিয়ে অনেকটা জনসম্মুখেই বা অন্যান্য খদ্দেরদের সামনেই তারা খদ্দেরের মনোরঞ্জন করে। এদের অনেকেরই আগমন বিভিন্ন পতিতালয় থেকে। সরকার পতিতাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই যখন বিভিন্ন পতিতালয় ভেঙে দেয়,তখন ভাসমান হয়ে এরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। কেউ কেউ আবার আসে শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকা থেকে। বস্তির মেয়েরা-যাদের চেহারা বা শরীর স্বাস্থ্য পুরোপুরি বা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে, অন্য কোনো কাজ করতে সক্ষম নয় তারা এসে ভিড় জমায় শহরের বিভিন্ন জনাকীর্ণ জায়গায়।
এ ধরনের পতিতার বেশি আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় বিজয় সরণি এলাকায়। রাত ৯ টা বাজতেই ওরা দখলে নেয় বিজয় সরণির সামনের রাস্তা। সন্ধ্যা নামার পরই সব গোছগাছ করে রাখে এখানকার পতিতারা। খদ্দেরের মনোরঞ্জনের অস্থায়ী এক ধরনের ঘরও করে এখানকার পতিতাদের অনেকেই। এ রঙ্গকুঞ্জ এক ফালি কাপড় বা পলিথিন দিয়ে সাজানো হয়। কেউ কেউ আবার গায়ের ওড়না দিয়েই বেড়া বানিয়ে লোকচক্ষু থেকে নিজের আদিম পেশাটি আড়ালের চেষ্টা করে।
রাজধানী ঢাকা শহরের লালবাতির নিচে যৌন ব্যবসা করা নারীদের অধিকার নিয়ে কারও যেন ভাবার সময় নেই। রাজধানী ঢাকার ৪৯ থানার প্রায় ৮০ টির ও বেশী স্পটে ৪ শতাধিক হোটেল ও প্রায় আড়াই হাজারের মত বাসা-বাড়ী ও ফ্ল্যাটে চলছে জমজমাট এই দেহ ব্যবসা। ঢাকার নয়াবাজারের ইংলিশ রোডের পতিতা পল্লী তুলে দেয়ার পরই সারা শহর জুড়েই বিস্তার লাভ করে পতিতাবৃত্তির এই ব্যবসা। যার ফলশ্রুতিতে দেশে প্রতিদিন প্রায় ১১ জন করে এইডস রোগী শনাক্ত হচ্ছে।