ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় 2022
ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় 2022
অনেক সময় আমাদের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকে। যা আমরা ঘুর্নাক্ষরেও টের পাইনা। ফেদবুক একাউন্ট হ্যাক? কিভাবে সম্ভব? আমি কি এমন কাজ করেছি যার জন্য ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়েছে ?
অনেক সময় আমাদের কাছে একাউন্ট লগ ইনের বিষয়ে নোটিফিকেশন আসে, বিভিন্ন ধরনের বার্তা আসে, যার মানে বুঝা যায় আপনার একাউন্ট কেউ অন্য ডিভাইস থেকে লগ ইন করার চেষ্টা করছে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমাদের একাউন্ট কেউ হ্যাক করার চেষ্টা করছে।
এটাকে অনেকেই সাইবার হামলা বলে। একাউন্ট হ্যাকিংয়ের বিষয় টা নতুন কিছু নয়। যত দিন যাচ্ছে ততই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়ার সাথে সাথে একাউন্ট হ্যাক হওয়ার প্রবনতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফেসবুক একাউন্ট শুধু বর্তমানে নিছক সময় কাটানোর জন্যই মানুষ ব্যবহার করেনা। বর্তমানে একটি ফেসবুক একাউন্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক সহ সকল কাজেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে একটি ফেসবুক একাউন্ট দিয়ে লাখ লাখ টাকা অনেকেই আয় করে থাকেন। তাছাড়া ফেসবুক যেন হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনেরই একটা অংশ। এজন্যই আমাদের অনেকের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকাররা টার্গেটে পরিনত করেছে।
তাই আমাদের ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায়
ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য নিচের নির্দেশনা গুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করুন ।
পাসওয়ার্ডঃ
ফেসবুকের পাসওয়ার্ড অন্য কোন সাইটে বা অন্য কোন প্লাটফরমে ব্যবহার করা উচিত নয় আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কখনোই কারো সাথে শেয়ার করা ঠিক নয়।
পাসওয়ার্ড এমন ভাবে সেট করতে হবে যা বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা বা বিভিন্ন প্রতীক সহ কমপক্ষে আটটি সংখ্যা দিয়ে বানাতে হবে, যা সহজে কেউ অনুমান করতে পারে না।
পাসওয়ার্ড সেট করার সময় কখনোই আপনার নিজের নাম বা আপনার কাছের কেউ, জন্ম তারিখ, বিবাহ বার্ষিকী, পরীক্ষার বছর ইত্যাদি দিবেন না।
লগইন:
ফেসবুকের লগইন তথ্য ফেসবুক ছাড়া অন্য কোথাও প্রবেশ করা যাবে না। অনেক সময় স্ক্যামাররা ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে এবং লগইন ইমেইল বা ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড চাইতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে ওয়েবসাইটের ইউআরএল চেক করুন।
যেখানে অনেকেই একই কম্পিউটার ব্যবহার করেন যেমন সাইবার ক্যাফে, বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে, সেখানে ফেসবুক ব্যবহারের পর আপনাকে অবশ্যই লগ আউট করতে হবে। যদি আপনি ভুলে যান, আপনার ফোন বা অন্য কোন কম্পিউটারে ফেসবুকে লগ ইন করুন এবং নিরাপত্তা এবং লগইন সেটিংসে যান যেখানে আপনি সর্বশেষ লগ ইন করেছেন। সেখানে আপনি ডিভাইসটি সনাক্ত করে লগ আউট করে ফেলুন।
বন্ধু গ্রহণে সাবধানতা:
ফেসবুকের পরামর্শ হলো আপনি যাকে চেনেন না তাকে কখনো বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন না। এই ক্ষেত্রে, হ্যাকাররা আপনার টাইমলাইনে আপনার বন্ধু হিসাবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে, আপনাকে বিব্রতকর পোস্টে ট্যাগ করে, অথবা হ্যাকিং বার্তা পাঠিয়ে স্প্যাম ছড়িয়ে দিতে পারে।
দূষিত সফটওয়্যার বা কম্পিউটার: অনেক সময় আপনার ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার, এমনকি ব্রাউজিং সফটওয়্যার যেমন ক্রোম বা ফায়ারফক্স বিশেষ কোড দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যদি আপনার অ্যাকাউন্ট অন্যদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পাঠাতে থাকে, অথবা অ্যাকাউন্টের ভুল ব্যবহারের ইতিহাস দেখায়, অথবা অ্যাক্টিভিটি লগে এমন সব পোস্ট দেখে যা আপনি মনে করতে পারছেন না, তাহলে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
কম্পিউটার বা মোবাইল খুব ধীর গতিতে কাজ করছে, আপনি এমন সফটওয়্যার দেখছেন যা আপনি ইন্সটল করেননি, আপনার সার্চ ইঞ্জিন পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু আপনি তা করেননি, আপনাকে এখনও বুঝতে হবে যে আপনার একাউন্ট হয়তোবা আরেকজনের আয়ত্তে আছে।
এক্ষেত্রে ফেসবুক ইএসইটিটি বা ট্রেন্ডমাইক্রো সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটার বা মোবাইল পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছে। ব্রাউজার দূষণ ক্রোম ক্লিন আপ টুল ব্যবহার করে করা যেতে পারে। এছাড়াও ওয়েব ব্রাউজার নিয়মিত আপডেট করা উচিত।
সন্দেহজনক লিঙ্কে কখনোই ক্লিক করবেন না:
যদি আপনি কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা ফেসবুক বন্ধুর কাছ থেকে একটি ইমেইল, মেসেঞ্জার বা পোস্ট পান, যা তার স্বাভাবিক আচরণের সাথে নাও মিলতে পারে, তাহলে ক্লিক বা সাড়া না দেওয়া ভাল। উদাহরণস্বরূপ, কেউ লিখতে পারে যে তিনি কোথাও ভ্রমণের সময় বিপদে আছেন অথবা তিনি আপনার মেসেঞ্জারে একটি লিঙ্ক পাঠিয়েছেন অকারণে। এই ক্ষেত্রে, আপনি অ্যাকাউন্টে নক করে বা একটি বার্তা পাঠিয়ে তাকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে রিপোর্ট করার পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক।
কিভাবে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন?
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এই সব আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা এবং লগইন পৃষ্ঠায় রয়েছে। ফেসবুকে লগ ইন করার পর ডান পাশে আইকনে ক্লিক করে সিকিউরিটি অপশনে গিয়ে বিভিন্ন সেটিংসগুলো পরিবর্তন করে নিন।।
অপরিচিত লগইন সম্বন্ধে তথ্য:
একটু নিচের দিকে তাকান, যেখানে অপরিচিত লগইন সম্পর্কে সতর্ক বার্তা কিভাবে গ্রহণ করা যায় তার নির্দেশনা রয়েছে। অ্যাকাউন্ট এবং মেসেঞ্জার লগইন সম্পর্কে একটি সতর্ক বার্তা পেতে সম্পাদনা বোতামে ডান ক্লিক করুন। তারপর সেভ বাটনে ক্লিক করুন এবং আপনাকে আপনার পাসওয়ার্ড চাওয়া হবে। তারপর থেকে, যদি আপনার অ্যাকাউন্ট কোথাও লগ করা থাকে, তাহলে ফেসবুক আপনাকে একটি বার্তা দিয়ে জানাবে।
টু স্টেপ ভেরিভিকেশন:
এই পৃষ্ঠার নীচে, আপনাকে প্রথমে ২ স্টেপ ভেরিভিকেশন সিস্টেম চালু করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, এমনকি যদি কেউ আপনার পাসওয়ার্ড পায়, তারা লগইন করতে পারবে না কারণ তাদের কাছে এই কোডটি নেই। এর জন্য আপনার মোবাইল নম্বর বা ফোনে একটি নোটিফিকেশন যাবে যা ব্যবহার করে ফেওবুকে লগইন জরতে হবে।
আপনি নিরাপত্তা এবং লগইন পৃষ্ঠায় গিয়ে আপনার মোবাইল ফোন নম্বর যোগ করতে পারেন। তারপর থেকে, যতবার আপনি ফেসবুকে লগইন করবেন, একটি ফ্রি এসএমএস আসবে এবং আপনাকে এটি প্রবেশ করে লগইন করতে হবে।
বন্ধু নির্বাচন করা:
যদি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কখনও আটকে যায়, তাহলে আপনি নির্বাচিত বিশ্বস্ত বন্ধুর সাহায্যে তা পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এই সুরক্ষা পৃষ্ঠার নীচে তিন থেকে পাঁচজন বন্ধু নির্বাচন করা হয়েছে যারা আপনার অ্যাকাউন্ট লক বা হ্যাক হয়ে গেলে আপনাকে ফিরে পেতে সাহায্য করবে। সম্পাদনা বোতামে ক্লিক করুন এবং তিন থেকে পাঁচ বন্ধু নির্বাচন করুন।
যাইহোক, যদি আপনি নিয়মিত কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তাহলে ব্রাউজারে সেভ করা থাকলে আপনাকে এই পদ্ধতি বারবার অনুসরণ করতে হবে না।
ফেসবুককে নিরাপদ রাখতে বিশেষজ্ঞরা আরো কিছু সতর্কতার ওপর জোর দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা আইডি এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন যদি আপনি মনে করেন যে কেউ আপনার অনুমতি ছাড়া ফেসবুকে প্রবেশ করেছে বা করতে চায়।
তারা আরও মনে করেন যে, পাসওয়ার্ড প্রতি দুই মাস পরপর পরিবর্তন করা উচিত।
আপনি যদি কখনো মনে করেন যে কারো পোস্ট বা বিবৃতি আপনার জন্য ক্ষতিকর বা হুমকিস্বরূপ, আপনি রিপোর্ট বাটনে ক্লিক করে ফেসবুকে রিপোর্ট করতে পারেন।
শিশুদের জন্য আপত্তিকর ভাষা, গালিগালাজ বা পোস্ট ব্যবহার বন্ধ করতে ফেসবুক বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। আর আপনি চাইলে খুব সহজেই ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করতে পারেন।