ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন | ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস

ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন | ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস 

সময় জানার জন্য আমাদের ঘড়ির দরকার হয়। বর্তমান সময়ের সব কিছুই প্রতিটি সেকেন্ড হিসেব করে চলছে। যেমন বিমান, রেলগাড়ি, বিদ্যুৎ, কল কারাকানা, স্কুল কলেজ, আফিস আদালতসহ প্রায় সব কিছুই। একবারও কি ভেবে দেখেছেন, যদি এই জেনারেশনে এসে ঘড়িই না থাকতো, তাহলে কি অবস্থা হতো? কিভাবেই বা চলতো এই সিস্টেমগুলো? ঘড়ি ছাড়া আধুনিক এই জীবন ব্যবস্থা যেন অসম্পূর্নই থেকে যেতো। 
 
কিন্তু, আপনি কি জানেন। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘড়ি কে কবে এবং কোথায় আবিষ্কার করেছিলেন? আর এই ঘড়ি আবিষ্কারের পিছনে রয়েছে কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস। জানা যায় মিসর ও ব্যবিলনে সর্ব প্রথমে ঘড়ি আবিষ্কৃত হয়েছিলো। ঘড়ি আবিষ্কারের সেই মজার আর রোমাঞ্চকর সব তথ্য জানতে সম্পূর্ন পোস্ট টি পড়ুন।  
 
বর্তমানে আমরা যে ঘড়ি ব্যবহার করি। তা একদিনে আবিষ্কৃত হয়নি। প্রথমে ঘন্টার কাঁটা বানানো হয়েছিল, এরপর মিনিটের কাটা এইভাবে একটু একটু করে ঘড়ি আবিষ্কার করা হয়েছিল। ঘড়ি আবিষ্কারের পর এর সাহায্যে সারাদিনের প্রতিটি সেকেন্ডের হিসাব রাখা সম্ভব হয়েছে। 
 
কিন্তু, প্রশ্ন থেকেই যায় ঘড়ি আবিষ্কার এর আগ পর্যন্ত আগেকার দিনের মানুষেরা কিভাবে সময়ের হিসেব রাখতো। কেমন ছিল তাদের জীবন ব্যবস্থা। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বনে জঙ্গলে পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত। সে সময় মানুষের ঘড়ির তেমন একটা প্রয়োজন ছিল না। মানুষ যখন সময়ের হিসাব রাখার প্রয়োজন অনুভব করলো তখন তারা সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্তের হিসাবে সময়ের অনুমান করত। এইভাবে মানুষ তখন তাদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম চালাত।

ঘড়ি কিঃ যে যন্ত্রের বা ডিভাইসের সাহায্যে আমরা সময় জানতে পারি তাই হল ঘড়ি। এই ঘড়ি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে ।। যেমনঃ দেয়াল ঘড়ি, হাতি ঘড়ি, কাটা ঘড়ি,ডিজিটাল ঘড়ি, ইত্যাদি ।। 

এরপর যখন ধীরে ধীরে মানুষ আরো বুঝতে শিখল তখন সময় কে জানার আগ্রহ তাদের আরো বেড়ে গেল। তাই তারা সূর্যের আলোর ছায়া দেখে সময়ের অনুমান করতে শুরু করে। তারা দেখল, সূর্যের আলোতে যে ছায়া পড়ে তা এক জায়গায় স্থির না থেকে দিন বাড়ার সাথে সাথে সেই ছায়াও সরে যায়। তখন তারা সূর্য ঘড়ি আবিষ্কার করল।

সূর্যঘড়িঃ

সূর্যঘড়ির চারিদিকে ঘন্টার আর মিনিটের কাটা একে দেওয়া হতো আর মাঝখানে একটা লম্বা লাঠি লাগিয়ে দেওয়া হতো। সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত সূর্যের আলো ওই লাঠির উপর এসে পড়ায় তার ছায়া ঐ কাটার উপর এসে পড়তো এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে তার ছায়ায় বুঝা যেত এখন কটা বাযে। 
কিন্তু এই ঘড়ির একটি সমস্যা ছিল, রাতের আধারে কিংবা দিনে আকাশে মেঘ থাকলে সূর্যের আলো না থাকার কারণে মানুষ সঠিক সময় জানতে পারত না। কিন্তু সূর্যঘড়ি ছিল মানুষের আবিষ্কার করা সর্বপ্রথম ঘড়ি।এই ঘড়ির ব্যবহার তারপর কমে যেতে থাকে ধীরে।তারই ধারাবাহিকতায় পানিঘড়ির আবিষ্কার হয়।

পানিঘড়িঃ 

খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ সালে মীশরীয়রা এই পানি ঘড়ি আবিষ্কার করেছিল। পানি ঘড়িতে দুটি পাত্রের ব্যবহার করা হতো। একটি পাত্রের নিচে একটি ছোট ফুটো করে দেওয়া হতো। সেই পাত্রের পানি একটু একটু করে সেই ফুটো দিয়ে পাশে রাখা অন্য পাত্রে পড়তো। আর ওই পাত্রে পানির পরিমাণ অনুমান করে সময়ের হিসাব করা হতো। তখনকার সময়ে বেশ কয়েকটি দেশে এই ঘড়ির ব্যবহার শুরু হয়েছিলো। তবে এই ঘড়ির কিছু অসুবিধা থাকার কারনে জাহাজে ব্যবহার করা যেত না। এছাড়া শীতপ্রধান দেশগুলোতে এ ঘড়ির পানি জমে বরফ হয়ে যেত, যার  কারনে ঘড়ি বন্ধ হয়ে যেত। ফলে মানুষ তখন এই জলঘড়ির বিকল্প খোঁজা শুরু করে দিল। তারই পরিপেক্ষিতে আবিষ্কৃত হয় বালি ঘড়ি।

বালুঘড়িঃ

এই বালু ঘড়ি ছিল কিছুটা পানি ঘড়ির মতই। বালু ঘড়িতে একটা ফানেল ব্যবহার করা হত, যার মাঝ বরাবর থাকত চ্যাপ্টা আর নিচের অংশে থাকত স্কেলের মত দাগ কাটা। ফানেলের উপরের অংশে মিহি ও দানাদার বালু ঢালা হতো। সেই বালু মাঝের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে নিচে পরে জমা হত আর সেই স্কেলের মত দাগ হিসেব করে সময় জানা যেত।
 
মধ্যযুগে ইউরোপে এই ঘড়ি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। সামান্য নড়াচড়ায় কোন সমস্যা হয় না বলে এই ঘড়ি জাহাজেও সহজে ব্যবহার করা যেত। সূর্যঘড়ি বা জলঘড়ির মতো এত অসুবিধা না থাকায় তখন এ ঘড়ি অনেক জনপ্রিয়তা পায়।

মোমঘড়িঃ

এরপর নবম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে আলফ্রেড দ্যা গ্রেট মোমঘড়ি আবিষ্কার করেছিল। তিনি একটি লম্বা মোমবাতি নিয়ে তাতে সমান মাপে কিছু দাগ কেটে দিত। এরপর মোমবাতিটা কে জ্বালিয়ে দেওয়া হত। আর মোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে কমতে থাকতো। তখন মোমবাতির উপর দেওয়া চিহ্নগুলো দেখে সময়ের অনুমান করা যেত। 

ঘড়ি কে আবিষ্কার করেনঃ ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন এ নিয়ে র‍য়েছে হাজারো তর্ক বিতর্ক। তবে মিডিয়া ও ইতিহাসের হিসেব অনুযায়ী পিটার হেনলেইন কে আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কারকারক হিসেবে মানা হয় । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি আবিষ্কার করা হয়েছিল।যেমন, সূর্যঘড়ি, পানিঘড়ি, মোমঘড়ি ইত্যাদি । তবে যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কারের জন্য পিটার হেনলেইন এর কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি ।

আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কার নিয়ে রয়েছে অনেক তর্ক বিতর্ক। একটা বিষয় আপনাদের আবারো মনে করিয়ে দেই, আধুনিক ঘড়ির আবিষ্কার একবারেই সম্ভব হয়নি। প্রথম আধুনিক ঘড়িতে শুধু ঘন্টার কাঁটা ছিল। এরপর মিনিটের কাটা এল। আর তারপর সেকেন্ডের কাঁটা। এই কারণে আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাস হাজারো তর্ক বিতর্কে ভরা। 

অনেকেই মনে করেন, প্রাচীন গ্রীকের পদার্থবিদ আর্কিমিডিস প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি বা আধুনিক ঘড়ি আবিষ্কার করেন কিন্তু বিগত দিনের ইতিহাস আর মিডিয়া রিপোর্টের অনুসারে ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ সিলভেস্টার আধুনিক ঘড়ি বা যন্ত্র ঘড়ি আবিষ্কার করেন। যন্ত্র ঘড়িতে অনেকগুলো চাকা লাগানো থাকত। এই ঘড়িতে শুধু ঘন্টার কাটা ব্যবহার করা হতো যা নির্দিষ্ট সময় পরপর বেজে উঠত। কিন্তু এই ঘড়িতে মিনিট বা সেকেন্ডের কাটা ছিল না।  

অনেকর মতে ১৩০০ সালে হেনরি দেবিকা গোল ডায়ালের ঘড়ি আবিষ্কার করেন। কিন্তু এই ঘড়িতেও মিনিট ও সেকেন্ডের কাঁটা ছিল না। এই ঘড়িটি সংশোধন করে আজকের আধুনিক ঘড়িতে রুপ দেয়া হয়েছে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঘড়ির আকার অনেক বড় বড় হতো। তখন ঘড়ি শুধুমাত্র বাজার বা বড় কোন বিল্ডিং এ লাগানো হতো। এই কারণে তখনকার দিনে ঘড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেত না। 

অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, 
১৫৮৪ সালে সুইজারল্যান্ডের জোস্ট বার্গি ঘড়ির মিনিটের কাটা আবিষ্কার করেন। তিনি তার একজন বন্ধুর বাড়ির ঘড়িতে মিনিটের কাটা লাগিয়েছিলেন। আর এরপর থেকেই ঘড়িতে মিনিটের কাঁটার ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় ঘড়ি ওজনে অনেক ভারি হত। আর তাই সময়ের সাথে সাথে ঘড়িকে হালকা আর ছোট করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। 

ঘড়ি কবে,কখন আবিষ্কার হয়েছিলঃ পিটার হেনলেইন ইংল্যান্ডে ১৫৫০ সালে ক্লোক ওয়াচ আবিষ্কার করেন। এই ঘড়িতে কোন ঘন্টার কাটা ছিল না। ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডে জোস্ট বার্গি মিনিটের কাটা আছে এমন ঘড়ি আবিষ্কার করেন। 

বর্তমানে বেশ কিছু দেশে পিটার হেনলেইনকে ঘড়ির আবিষ্কারক হিসেবে মানা হয়। পিটার হেনলেইন এমন একটি ঘড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। এর আগের কোন ঘড়িই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া যেত না। তিনি খুবই দামি ঘড়ি বানাতেন। যা শুধু মাত্র তখনকার দিনের ধনী ব্যক্তিদেরই ব্যবহার করার সামর্থ্য ছিল। তখন ঘড়ি আবিষ্কারের জন্য খুবই আদর্শ সময় ছিল।
 
1675 সালে স্পাইরাল স্প্রিং এর সাহায্যে সময় মাপার সিস্টেম আবিস্কৃত হলো। ঘড়ি তখন ঘন্টার সাথে সাথে মিনিটের হিসাব দিতে শুরু করে। ঘড়ি তখন ছোট হওয়ার সাথে সাথে ফ্যাশনের উপকরনে পরিনত হতে শুরু করে। 

আর এর ব্যবহার তখন শুরু হয়েছিল যখন ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস তার সোনার চেইনের সাথে ঘড়ির ডায়েল আটকে তা নিজের পকেটে রাখতে শুরু করেছিল।

যান্ত্রিক ঘড়ি কে আবিষ্কার করেছিলঃ ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে যান্ত্রিক ঘড়ি লিয়াং সান এবং আই সিং আবিষ্কার করেছিলেন।

বর্তমানে আমরা যে ঘড়ি হাতে ব্যবহার করি তা প্রথমবার ফ্রান্সের দার্শনিক ব্লেসি প্যাসকেল আবিষ্কার করেছিলেন। এনাকে ক্যালকুলেটর এর আবিষ্কারক হিসেবেও মনে করা হয়। প্রায় 1650 সালের আশেপাশে মানুষ ঘড়ি পকেটে রেখেই ঘুরতো। কিন্তু ব্লেসি পেস্কেল প্রথমবার একটি ঘড়ির ডায়াল কে দড়ির সাথে বেঁধে হাতে ঝুলিয়ে দেয়। যাতে তিনি কাজ করতে করতে সময় দেখতে পান । এভাবে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি আবিষ্কার শুরু হয়। তাই বিক্রেতারা ঘড়ির আলাদা আলাদা ডিজাইন বানাতে শুরু করে। 

পেনডুলাম ঘড়ি কে আবিষ্কার করেনঃ ১৬৫৬ সালে নেদারল্যান্ডসের খ্রিস্টান হিউজেনস আবিষ্কার করেছিলেন পেনডুলাম ঘড়ি।

পুরনো দিনের ঘড়ি অনেক দামি হত। তাই সবাই ঘড়ি কিনতে পারতো না । এই কারণে 18 শতকের  দিকে রাজারা বড় বড় ঘড়ি তাদের দুর্গের সামনে বানিয়ে রাখতা। যাতে গ্রামবাসীরা সবাই দেখতে পায়। এছাড়া তারা অনেক বড় বড় ক্লক টাওয়ার বানাত। যাতে গ্রামবাসীরা অনেক দূর দূর থেকেও সময় দেখতে পায।

১৮৮৩ সালে জোসেফ পালওয়েবার সর্বপ্রথম ডিজিটাল ঘড়ি আবিস্কার করে। এরপর ১৯৭০ সালে LED ডিসপ্লে যুক্ত হাতঘড়ির প্রচলন শুরু হয়। আর হাতঘড়ির সর্বাধুনিক রুপ হচ্ছে আজকের স্মার্টওয়াচ। সর্বপ্রথম স্মার্টওয়াচ চালু হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে যা যা করা হয়ে থাকে তার সব কিছুই এখন একটি স্মার্টওয়াচ দ্বারা করা সম্ভব। আর এ সবই প্রযুক্তির আশির্বাদে সম্ভব হয়েছে।

বন্ধুরা এই ছিল আজকের ঘড়ির আবিষ্কার নিয়ে আর্টিকেল। আর্টিকেল টি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার যদি কোন কিছু বলার থাকে তাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর্টিকেল টি ভালো লাগলে  শেয়ার করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন।
Next Post Previous Post
2 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ ৩:৫৭ PM

    I am confused

  • নামহীন
    নামহীন ৭ জুলাই, ২০২৩ এ ১১:১৬ AM

    আল জাজারী সর্ব প্রথম স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ঘড়ির ধারণা দেন।

Add Comment
comment url