যে খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে খাবেন না।

বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ পরিবারেই ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে ফ্রিজ ব্যবহার করেন না, এমন মানুষ আপনি খুঁজেই পাবেন না। যদিও সবার ফ্রিজ কেনার সামর্থ্য না থাকে তাহলেও দেখবেন যে পাশের রুমের বা পাশের বাড়ির কারো না কারো ফ্রিজ সবাই ব্যবহার করে থাকে। যদি প্রশ্ন করা হয় ফ্রিজ আমরা কেন ব্যবহার করি, তাহলে সবার কাজ থেকেই এককথায়, একটি উত্তরই আসবে, আর তা হলো, খাবার জাতীয় দ্রব্যকে ভাল রাখার জন্য, সতেজ রাখার জন্য। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে, ফ্রিজে যেমনি খাবার রাখলে খাবার ভাল থাকে, তেমনি কিছু খাবার আছে যেগুলো না জেনে ফ্রিজে রাখলে সেই খাবারের গুনাগুন তো ঠিক থাকবেই না।পাশাপাশি শরীরের জন্য সেই খাবারগুলো খুবই ক্ষতি করবে। প্রতিদিন আমরা যে সব খাবার খাই, তার মধ্যে অনেক খাবারই আছে যা আমরা দিনের খাবার দিনে খেয়ে শেষ করতে পারি না, তখন পরের দিন খাবার জন্য সেই খাবার আমরা ফ্রিজে রেখে থাকি। আমরা মনে করি ফ্রিজে খাবার রাখলেই তার পুষ্টিগুন ভালো থাকবে, এট কিন্তু ঠিক নয়। তাছাড়া এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ফ্রিজে রেখে খেলে তা জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই কোন কোন খাবারগুলো আমাদের ফ্রিজে রেখে খাওয়া ঠিক নয়।

যে খাবারগুলো কখনোই বেশিদিন  ফ্রিজে রেখে খাওয়া ঠিক না !!
 

১। সবুজ শাকঃ আমাদের প্রতিদিনই কম  বেশি শাকসবজি খাওয়া দরকার। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু আমরা অনেক সময় সবুজ জাতীয় শাকগুলো ফ্রিজে রেখে থাকি অন্য কোনদিন খাবার জন্। ফ্রিজে যদি আপনি কোন সময়ে ধনিয়া পাতা বা অন্য কোন ধরনের সবুজ শাক রেখে থাকেন তাহলে দেখবেন কয়েকদিন পর শাকের অবস্থা কি হয়ে যায়। শাকের কিছু কিছু অংশ পচে যায় এবং তার রঙ হয়ে যায় অনেকটা খয়েরি। তাই কোন সময় সবুজ শাক ভুল করেও বেশ কয়েকদিন ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়।

২। সেদ্ধ করা ডিমঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা একসাথে ডজন ১২ টি) হিসেবে বা কেস হিসেবে (৩০ টি) বাজার থেকে ডিম কিনি এবং তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখি। যখন আমাদের দরকার হয় তখনই আমরা রান্না করি ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে। সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা অনেক সময় ফ্রিজে সিদ্ধ করা ডিম রেখে দেই আমাদের সময় বাচানোর জন্য। এটা করা কখনোই ঠিক নয় কারন, সিদ্ধ করা ডিম ফ্রিজে রাখলে ডিমের যে অংশ সাদা থাকে, তা শুকিয়ে গিয়ে পুরো ডিমটাই এক সময় ফেটে যেতে থাকে। আর এতে করে ডিমের ভিতর ব্যাকটেরিয়া ঢুকতে শুরু করে। যার ফলে ডিমের যে সাদা অংশটি থাকে, তা শক্ত হয়ে রাবারের মতো হয়ে যায়। তখন আর ডিমের পুষ্টিগুন কিংবা স্বাদ কোনটাই থাকেনা। এখন আপনারাই বলেন তখন কি আর সেই ডিম টি খাওয়ার মতো উপযুক্ত থাকে বা খাওয়া কি ঠিক? তাই ভেল করেও কখনোই সেদ্ধ করা ডিম ফ্রিজে রেখে খাবেনা, এতে করে পরবর্তীতে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই বাসা বাধতে পারে। 

৩। ভাজা খাবারঃ যেকোনো ভাজা খাবার গরম গরম খাওয়াই ভালো। এই ভাজা খাবার গুলো যখন আপনি ফ্রিজে রেখে খাবেন তখন এর খাবার মান বা স্বাদ বা পুষ্টিগুন কোন ঠিক না থাকার কারনে আপনার শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনি এই খাবার খেলে আপনার হার্ট এটাক পর্যন্তও হতে পারে। তাই সব সময় চেষ্টা করুন ভাজা খাবার গুলো ফ্রিজে না রেখে খেতে।

৪। দুদ্ধ জাতীয় খাবারঃ ফ্রিজে কখনোই দুদ্ধ জাতীয় খাবার রেখে খাবেন না। কারন,যে কোন দুগ্ধজাত খাবার আপনি ফ্রিজে রাখেন না কেন, দেখবেন তার পুষ্টি গুন ১০০% ই নষ্ট হয়ে যায়। যেমনঃ দুধ, দধি, মিষ্টি, চিজ ইত্যাদি ফ্রিজে রাখলে দেখবেন পরে এগুলো দইয়ের মতো হয়ে হয়ে গিয়ে এবং এর স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশিদিন দুদ্ধ জাত খাবার ফ্রিজে রেখে খাওয়া ঠিক নয়, এগুলো ফ্রিজে না রেখে সাথে খেয়ে নেয়াই ভালো। 

৫। রান্না করা ভাতঃ আমরা সবাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করি। অনেকে রান্না করার সময়ই পাই না। তাই তাই অনেকে একবার ভাত রান্না করে ফ্রিজে রেখে কয়েকদিন পর্যন্ত খেয়ে থাকি থাকি। এটা ইচ্ছে করেই হোক কিংবা অনিচ্ছা করেই হোক এটা কিন্তু এক সময় আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর এমনটা যদি আপনি প্রতিনিয়ত করে থাকেন তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনি নিশ্চিত সমস্যায় পরবেনই। কারন, রান্না করা ময়দা জাতীয় খাবার বা ভাত ফ্রিজে বেশিদিন রাখলে তার গুণাগুণ ভালো থাকেনা। তাই কখনোই রান্না করা ভাত বা পান্তা ভাত ফ্রিজে রেখে খাবেন না। 

৬। কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয়ঃ যারা বাসাবাড়িতে ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকে, তাদের বেশিরভাগ ফ্রিজই খুলে দেখলে দেখা যাবে কোন না কোন কোমল পানীয় বা কোল্ড ড্রিংক্স রয়েছেই। আর যদি গরমের দিন হয় তাহলে তো কথাই নেই। ফ্রিজে এসমস্ত কোমল পানীয় পান  করার ঠিক নয়। কারন, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় পানীয় বা কোমল পানীয় ফ্রিহহহহহজে থাকে তাহলে তার ভিতরে অ্যালুমিনিয়াম  ও সোডার পরিমান বেড়ে সেই পানীয় বিষাক্ত হয়ে যায়। আর এই বিষাক্ত পানীয় পান করা কি আমাদের জন্য ঠিক হবে? তাই আমার যদি পানিও পান করার ইচ্ছে হয়ে থাকে তাহলে দোকান থেকে কেনার পর তা ফ্রিজে রেখে না খেয়ে সাথে সাথেই তা খেয়ে নিবেন। তাহলে হয়ত শরীরের অনেক  অনাকাঙ্খিত রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে পারেন। 

৭। পানি জাতীয় ফলমূলঃ যে সমস্ত ফলমূল বা সবজি তে পানির পরিমাণ বেশি থাকে সেই ফল বা সবজি ফ্রিজে বেশি দিন রেখে খাওয়া ঠিক নয়। কারন এগুলো যখন ফ্রিজে রাখা হয় তখন এগুলো শক্ত হয়ে থাকে কিন্তু যখন ফ্রিজ থেকে বের করা হয় তখন এগুলো আবার নরম হয়ে যায়। যার ফলে এই ধরনের ফল বা সবজির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। যেমন আপেল, তরমুজ, শসা, টমেটো, লেটুস, পালং শাক ইত্যাদি। তাই এই ধরনের ফল বা সবজি বেশিদিন ফ্রিজে খাওয়া কখনোই আমাদের শরীরের জন্য ভাল হবে না।  

শেষ কথা, আমরা আমাদের খাবারগুলো ভালো এবং তাজা রাখার জন্য ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা ফ্রিজে রাখা খাবারগুলো যত কম খাব ততই আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। রোগমুক্ত থাকবে আমাদের শরীর। বিশেষ করে, উপরে যে খাবার গুলোর কথা বলা হলো সেই খাবারগুলো কখনোই বেশিদিন ফ্রিজে রেখে খাবেন না। 

 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url