সম্রাট শাহজাহানের মেয়ে জাহানারার ইতিহাস

সম্রাট শাহজাহানের মেয়ে জাহানারার ইতিহাস


এক বাদশা যিনি তার সমস্ত হৃদয় দিয়ে তৈরি করেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও বিস্ময়কর এক কবর তাজমহল। তাজমহল নির্মানের জন্য শাজাহান বহুকাল ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কিন্তু তার গৌরবময় শাসন আমলে কিছু কালিমা লিপ্ত ইতিহাস জড়িয়ে আছে । এমন একটি গুজব আছে যে, শশজাহান ও তার মেয়ে জাহানারার ভিতর একটি অবৈধ সম্পর্ক আছে। অনেক সময় এই গুজব মোঘলদের গৌরবময় ইতিহাসকেই ঘোলাটে করে দিয়েছিল। আজকের এই ভিডিও তে আমরা সেই ইতিহাসের সত্যতা জানব। যা হয়তো আপনি জানেন না। কিন্তু তার আগে আপনি আমাদের চ্যানেলে নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আর পাশে থাকা বেল আইকনে ক্লিক করুন।


জাহানারা বেগম ২৩ শে মার্চ ১৬১৪ সালে জম গ্রহন করেন। জাহানারা বেগম ছিলেন  শাহজাহান ও মমতাজ বেগমের প্রথম সন্তান । তার আরেক জন বোন ছিল, নাম ছিল তার রওডন আরা। জীবন্দশায় জাহানারা বেগম দুই বার অগ্নি দ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও জাহানারা বেগম আপরুপ সুন্দরী ও মেধাবী ছিলেন। সৌন্দর্যের পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা,সঙ্গীত ও রাজনীতিতে বেশ সুদক্ষ ছিলেন জাহানারা বেগম। তিনি নিজে দুইটি বই লিখেছিলেন ফার্সি ভাষায়। ১৬৪৮ সালে নতুন তৈরি শহর শাহজাহানা বাদের ১৯ টির ভবনের ভিতর ৫ টি ভবনই তার তৈরি নকশায় নির্মিত হয়। এই শাহজাহানাবাদ বর্তমানে old দিল্লি নামে পরিচিত । এই নতুন শহর থেকে আসা সমস্ত অর্থ তার কাছেই আসতো। এমনকি তার একটি বানিজ্যের জাহাজও ছিল, যা তখনকার সময়ে ইংরেজ ও ডাচদের সাথে বানিজ্য করতে ব্যবহার করা হত। জাহানারা বেগম মুঘল সম্রাজ্যের সব থেকে সম্মানীয় নারী ছিলেন। 


১৬৫৭ সালে সম্রাট শাহজাহান অসুস্থ হয়ে গেলে, ক্ষমতা দখলের দ্বন্দে তার পুত্রদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। আওরঙ্গজেব কিংবা দাড়া শিকো, জাহানারা বেগম কে সবাই পছন্দ ও বিশ্বাস করতেন। নিজেদের মধ্যে লাগা যুদ্ধে দাড়া শিকো পরাজিত হলে ঐরঙ্গজেব দাড়া শিকোকে হত্যা করে জাহানারা বেগমকে দিল্লি তে নিয়ে আসেন এবং পরে তাকে বাদশা বেগম উপাধি দেন। বলা হয়ে থাকে, জাহানারা বেগম ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী। তখনকার সময়ে  বছরে তার প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আয় হতো। যার বর্তমান বাজার মুল্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। যখন মমতাজ মহল মারা যান তখন জাহানারার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এবং এত অল্প বয়সে বাদশা বেগম হওয়ার ফলে নিজের ভাই ও বোনদের দায়িত্ব তার কাধে চলে আসে এবং সেই সময় শাহজাহানও বেশ ভেঙ্গে পরেছিলেন। তার দেখাশোনার দায়িত্বও সামলান জাহানারা বেগম তার নিজের হাতে। জাহানারা বেগম মহিলাদের সুরক্ষার জন্য বেশ কাজও করেন। বলা হয় ওনার এক পরিচারিকার সাথে এক সৈন্য অশ্লীল আচরন করেছিল। জাহানারা বেগম সেই সৈন্যকে হাতির পায়ে পিষে মেরে ফেলার নির্দেষ দিয়েছিলেন। 


১৬৪৪ সালে জাহানারা বেগমের সাথে একটি ভয়ানক দুর্ঘটনা হয়। তার কাপড়ে হঠাৎ করেই আগুন লেগে যায়। শাহজাহান তার প্রিয় মেয়ের জন্য দেশ বিদেশ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসেন। প্রায় এক বছর শয্যাশায়ী ছিলেন জাহানারা বেগম। তখনকার সময়ে পাশ্চাত্য দেশের যেসব পর্যটকরা আসতো ভারতে, তারা খুবই অবাক হতেন জাহানারা বেগমের ক্ষমতা ও ধন দৌলত দেখে। কারন সে সময় ইংরেজ মহিলাদের কাছে এত ক্ষমতা বা ধন দৌলত থাকত না। বিয়ের পর তাদের সমস্ত সম্পদের মালিক হয়ে যেতেন তাদের স্বামী। এমনকি তাদের কাছে এত স্বাধীনতা ও ছিলনা। এই পর্যটকরা তখন ভাবতেন শাহজাহান ও তার মেয়ের মধ্যে নিশ্চয়ই অবৈধ কোন সম্পর্ক আছে। তাদের তৎকালীন ভারত ভ্রমনের ইতিহাসে তখন এমন মিথ্যা তথ্য ছড়াতে থাকে তারা। জাহানারা তৎকালীন মুঘল সম্রাজ্যের সব থেকে সুন্দরী নারী ছিলেন এবং শাহজাহানও তাকে ভীষণ ভালবাসতেন। জাহানারাও তার বাবার বিশেষ খেয়াল রাখতেন। এমনকি তার পোষাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া সব কিছু জাহানারার পরিচালনায় হতো।


জাহানারা ও শাহজাহানের বাবা মেয়ের পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই গুজব ছড়াতে থাকে। এমনকি কেল্লার কিছু দরবারী এমনও বলতেন যে, নিজের গাছের ফল খাওয়ার অধিকার সবার আছে। তাই শাহজাহানও ঠিক তাই করছে। এই অবৈধ সম্পর্কের কথা বেশিরভাগ ইতিহাসবিদগনই নাকোচ করে দেন। জাহানারা বেগম মোঘল সিংহাসনের জন্য দাড়া শিকোর সমর্থন করতেন। এর ফলে আওরঙ্গজেবের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে এমন গুজব ছড়াতেন। অনেকেই বলেন জাহানারা বেগমের কিছু গুপ্ত প্রেম ছিল। যার সাথে তিনি লুকিয়ে দেখা করতেন। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, জাহানারা বেগম সারাজীবন কুমারী ছিলেন।


তিনি কখনো বিবাহ করেন নি। এর পিছনে অনেক গুলো যুক্তি আছে। তিনি এতটাই সুন্দরী ও বিদ্বান ছিলেন যে, নিজের পছন্দের মত তিনি কাউকে খুজে পাননি। সম্রাট আকবরের পর থেকে মোঘল সম্রাজ্যের মেয়েদের বিয়ের চল প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কারন আকবরের বোনেরা সিংহাসনের দাবী করেছিল। মোঘল সম্রাজ্যে এমনিতেই সিংহাসন নিয়ে খুবই লড়াই হতো। তাই সেই লড়াই কমানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সম্রাট আকবর


সিংহাসনের লড়াইয়ে জাহানারা দাড়া শিকোকে সমর্থন করলেও ঔরঙ্গজেবের সিংহাসন দখলের পর জাহানারা বেগমের প্রতি তার সম্মান একটুও কমেনি। এমনকি তিনি জাহানারা বেগমকে বাদশা বেগম উপাধি দেন। মমতাজের মৃত্যুর পর মোঘল সম্রাজ্যকে বাচিয়ে রেখেছিল জাহানারা বেগম। আওরঙ্গজেব যখন শাহজহানকে বন্দী করে ছিলেন, জাহানারা বেগম তখন তার বৃদ্ধ পিতা শাহজাহানের সাথে কারাবন্দী থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কারন তিনি তার মায়ের মৃত্যুশয্যায় মাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি শাজাহান ও তার ভাই বোনদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। জাহানারা বেগম তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাই করেছিলেন।


১৬৮১ সালে ৬৬ বছর বয়সে মারা যান জাহানারা বেগম। আওরঙ্গজেব যখন এই খবর জানতে পারেন, তখন তিনি খুবই শোকাহত হয়ে পরেন এবং তিন দিনের জন্য রাজ সভা বন্ধের নির্দেষ দেন। জাহানারা বেগমের মৃত্যুর পর তার নির্দেষ অনুসারে তাকে নিজামুদ্দিন ওলির মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়। তার শেষ ইচ্ছা ছিল, তার কবর যেন খোলা আকাশের নিচে কাচা মাটির হয়, ইট পাথরের যেন না হয়। তার সেই শেষ ইচ্ছা পুরন করা হয়েচজিল। মোঘল সম্রাজ্যে মাত্র দুটি কবরই আছে যা খোলা আকাশের নিচে অতি সাধারনভাবেই নির্মান করা হয়েছিল। তা হলো জাহানারা বেগম এবং আওরঙ্গজেবের কবর। শাহজাহান ও জাহানারার সম্পর্ক ছিল কাচের মত স্বচ্ছ ও পবিত্র। তাই গুজবে কান না দেয়াই ভাল। 


বন্ধুরা, আজকের ভিডিও টি ভাল লাগলে লাইক করবেন। শাহজাহান ও তার মেয়ে জাহানারার সম্পর্ক নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে কমেন্টস করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেয


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url