মানবতার এমন ঘটনা বিরল । মাদারীপুর
সম্পর্কে আমার কাকা হয়। 💕💕💕
বাড়ি থেকে ঢাকা আসছিলাম আজকে। আমাদের বাড়ি থেকে মেইন রাস্তায় উঠতে হলে অনেকটা কাঁচা মাটির পথ হাঁটতে হয়। কাঁচা মাটির পথ টুকু হেটেই আসছিলাম। রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভাল না। বিভিন্ন জায়গায় কাদা মাটি ভাঙ্গা চোরা এবরো থেবড়ো অবস্থা।
পথিমধ্যে তার সাথে দেখা হল। কুশল বিনিময় করলাম। তারপর দুজনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে আসছিলাম। প্রচন্ড রৌদ্র ও গরম ছিল আজকে। তখন আনুমানিক দশটা থেকে সাড়ে দশটা হবে। কিছুটা দূর যেতেই আমাদের এলাকার আরেকজন সহজ-সরল কাকার সাথে দেখা হল (কালাগো বাড়ির সামনে)। সেই সহজ-সরল কাকা মোটামুটি আকারের একটা গাছের ডুম কাধে নিয়ে হেটে যাচ্ছিলো।
গাছের ডুমটি হয়তো খুব বেশী একটা বড় ছিল না। কিন্তু তার শারিরীক অবস্থা হিসেবে এটা তার জন্য ছিল মরার উপর খারার ঘা। দেখেই মনে হচ্ছে যেন তার এই গাছটি নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ভাঙ্গা চোরা কাদামাটির রাস্তা , প্রচন্ড রোদের তাপে ও গাছের টুকরাটি বহন করার কারনে সে এত পরিমানে ঘেমে গিয়েছিল যে, যে দেখবে তারই খারাপ লাগবে। কিন্তু কি আর করার? আর কার দিকেই বা কে তাকায় এই ব্যস্ততম যান্ত্রিক জীবনে।
আমার সাথে থাকা কাকা ঐ সহজ কাকাকে দেখতে পেয়েই তার কাছ থেকে গাছের ডুম টি নিয়ে নিজের কাধে করে হাটতে লাগলো। এরকম উপকার অনেকে করতেই পারে এটা অসাভাবিক বিষয় না। কিন্তু আমার কাছে যে বিষয় টা সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে সে বিষয়টি হচ্ছে।
কাকা আর আমি দু জনেই তো একসাথে হাটতে ছিলাম। আমি ঢাকা আসছি আর সে বাজারে যাচ্ছে। দুজনেই কিন্তু মোটামুটি পরিপাটি কাপড় চোপড় পড়ে ছিলাম। আমারও মন চেয়েছিল লোক টাকে একটু উপকার করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু আমার নিজের পরনে প্যান্ট জুতা থাকার কারনে তাকে উপকার করার বিষয় টা মাথা থেকে ভিন্ন দিকে মোড় নিল। আমি ঔ সহজ সরল কাকাকে বললাম, আপনি এই গাছটা তো গোসলের সময় খাল দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। এখানে বলা বাহল্য, আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তার পাশে ছোট একটা খাল রয়েছে। আমার মুখ থেকে যখন এই কথা বের হলো তার আগেই আমার সাথে থাকা কাকা ঐ কাকাকে বলল, ওটা আমার কাছে দাও, আহ কি গরম, কি রোদ, কি কষ্ট! দেও আমি দিয়ে আসি।
ঐ কাকা তখন থতমত খেয়ে গেল, কি করবে বুঝতে না পেরেই তখন গাছের টুকরা টি এই কাকার কাছে দিয়ে দিল। গাছটি তার কাছে দেয়ার পরে তার দিক তাকিয়ে মনে হল সে যেন হাফ ছেড়ে বাচল। আর আমার কাকা তার কাধে করে পরিপাটি জামা পরিধান করার পরেও নিঃসংকোচে, নির্দ্বিধায় গাছের টুকরা টি তার গন্তব্য স্থানে পৌছে দিল। আর আমরা (আমি আর সহজ সরল কাকা) পিছনে পিছনে সাহেবের মত হাটতে লাগলম। গাছ টি কাকার কাধ থেকে গন্তব্য স্থানের মাটিতে রাখার পরে তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম সে প্রচন্ড পরিমাণে ঘেমে গিয়েছে ও হাঁফিয়ে উঠেছে।
নিজের অজান্তেই ভেতর থেকে নিজের প্রতি একটা প্রশ্ন বের হয়ে এলো এই কাজটা তো তুইও করতে পারতি। কিন্তু কেন করলি না কিংবা আদৌও কি তুই এই কাজটা করতি ??
আরো কিছু প্রশ্ন জাগল মনে,
যারা এই এলাকার মানুষগুলোর জনপ্রতিনিধি,নেতা পাতা, তারা কি এই ভাঙ্গা চোরা কাচামাটির, কাদামাটির রাস্তাটি দেখে না?
না তারা তো অবশ্যই দেখে!
তাহলে রাস্তার কাজ কেন করেনা?
ওহ, তআহলে এলাকার মানুষগুলো হয়তো বড় ধরনের কোন পাপ-অন্যায় করেছে, যার শাস্তি স্বরুপ কাদামাটির এই রাস্তা টি এত উন্নয়নের এই জোয়ারেও কাজ না করে ফেলে রেখেছে রাস্তাটি।
যদি তাই হয়, এর জন্য নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। আপনি কি বলেন?
আহ কি কথা বলতে বলতে কোন দিকে চলে গেলাম।
আপনি কি করতেন, আজকে যে ঘটনা টি হয়েছে, সেখানে যদি আপনি থাকতেন। আপনি কি এমন উপকার করতেন?
এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমার এই কাকা কিন্তু জামে মসজিদের একজন ইমাম সাহেব এবং আল্লাহর রহমতে তার যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ সম্পত্তি রয়েছে। তা হওয়া এমন মানবতার সেবক হওয়ার, এত পরোপকারী হওয়ার তৌফিক আল্লাহ তাকে দিয়েছেন।
আজকের এই ঘটনাটি হয়তো বড় কোনো ঘটনা নয়, আহামরি কোনো বিষয় নয়, তারপরও আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিলো তাই বিষয়টি শেয়ার করলাম। লেখাটি কিংবা ঘটনা টি আপনার বিরক্তির কারন হলে ক্ষমা করবেন।
সবাই আমার এই কাকার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করেন এবং মানুষের উপকারে আত্ম বিনিয়োগ করার তৌফিক দান করেন। আমীন
সেই সাথে আমাদের সবাইকে আল্লাহ যেন মানবতার সেবায় কাজ করার জন্য তৌফিক দান করেন। আমীন।