ইউসুফ জুলেখার কাহিনী | ইউসুফ জুলেখার প্রেম কাহিনী


"প্রেম কইরাছে ইউসুফ নবী , তার প্রেমেতে জুলেখা বিবি রে"................

সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি এই মুখরোচক গানটি। ইউসুফ জুলেখার প্রেম কাহিনী নিয়ে সমাজে অনেক কেচ্ছা কাহিনী প্রচলিত আছে, বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে। ইউসুফ জুলেখার কাহিনী নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা,উপন্যাস, বানানো হয়েছে অনেক মুভি, সিরিয়াল। ইউসুফ জুলেখার কাহিনী নিয়ে কেচ্ছা কাহিনী ছোটবেলায় শুনতে কি যে মজা লাগতো, তা কি আর বলে বোঝানো যাবে? বিশ্বাসও করতাম গল্পের ছলে বলা তাদের এই  প্রেম কাহিনী। মনে মনে শ্রদ্ধা ভক্তিও চলে আসতো তাদের প্রতি।


হযরত ইউসুফ (আ) কি সত্যিই জুলেখার সাথে প্রেম করেছিলেন কি? নাকি যুগের পর পর একজন নবীর নামে মিথ্যা বানোয়াট কেচ্ছা কাহিনি বানিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কোন আল্লহর ওলী কিংবা নবী রাসুলদের সম্পর্কে কোন গল্প কাহিনি শুনে তা যাচাই-বাছাই না করে আমাদের মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করা উচিত নয়। আজকে আমরা ইউসুফ জুলেখার কাহিনী এর সত্যটা জানব ইনশাআল্লাহ। 

 


 হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর এগার তম সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ (আঃ)। ইউসুফ (আঃ) জন্মগ্রহন করেন "কেনান" নামের একটি স্থানে, যা বর্তনানে ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চল। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলটি খলিল এবং হেবরন নামেও পরিচিতি লাভ করে। ইউসুফ (আঃ) জীবনের শুরুতে ক্রীতদাস ছিলেন। ঘটনাক্রমে তিনি জেলের কয়েদী এবং শেষ জীবনে মিসরের মন্ত্রীও হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়। ইউসুফ (আঃ) আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ জ্ঞানের মাধ্যমে স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। তৎকালীন সময়ে যারা মূর্তি পূজা করতেন, ইউসুফ আঃ তাদের মাঝে মহান আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করতেন। ইউসুফ আঃ বাস্তবে খুবই সুদর্শন ছিলেন। 


হযরত ইয়াকুব আঃ, পুত্র ইউসুফ আঃ কে খুবই আদর করতেন ও ভালোবাসতেন। যা ইউসুফ আঃ এর সৎ ভাইয়েরা সহ্য করতে না পেরে খেলতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গভীর কুপে ফেলে দেয় ইউসুফ আঃ কে আর বাবার কাছে গিয়ে বলে যে তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। সেই কূপ থেকে পানি তোলার সময় মালেক ইবনে দোবর নামক এক ব্যাক্তির পানি ভর্তি বালতির সাথে ইউসুফ আঃ উপরে উঠে আসেন। ইউসুফ আঃ কে দেখে মালেক খুবই খুশি হন। তাকে ক্রিতদাস হিসেবে বিক্রয় করার জন্য বাজারে নিয়ে যান।


ইউসুফ আঃ খুবই সুদর্শন হওয়ায় বাজারে তার দাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। অবশেষে মিসরের অর্থমন্ত্রী খ্যাত "আজিজে মিসর" ইউসুফ আঃ এর ওজনের সমান রেশমি কাপড়, মৃগনাভী ও সোনার বিনিময়ে তাকে দাসী হিসেব কিনে নেন। অনেক তাফসিরগনের মতে, এই আজিজের স্ত্রীই হলেন জুলেখা বেগম, যার আসল নাম রঙ্গিল। এই জুলেখার সেবা যত্ন করার জন্যই আজিজ ক্রীতদাস হিসেবে কিনেছিলেন ছোট বালক ইউসুফ আঃ কে। ইউসুফ আঃ এই জুলেখার ঘরেই আস্তে আস্তে ছোট থেকে বড় হয়ে সুদর্শন যুবক হয়ে ওঠেন। জুলেখা হযরত ইউসুফ আঃ এর উপর আসক্ত হয়ে পড়েন। তিনি বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে ইউসুফ আঃ কে তার সাথে অনৈতিক কাজ করতে বলেন। কিন্তু ইউসুফ আঃ আল্লাহর ভয়ে তার সমস্ত কুপ্রস্তাব প্রত্যাখান করতেন এবং জুলেখাকে এই নোংরা কাজ করা থেকে সরে আসতে বলেন। কার কথা কে শোনে। 

 

একদিন জুলেখা ইউসুফ আঃ কে একা ঘরে পেয়ে ঘরের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। জুলেখা মূর্তি পূজা করতেন। তাই এই মূর্তিগুলোর সামনে খারাপ কাজ করতে দ্বিধা হওয়ায় মুর্তিগুলোকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর ইউসুফ আঃ কে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করতে বলেন। কিন্তু এবার ইউসুফ আঃ ঘৃনাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু সে মনে মনে আশঙ্কা করেছিল যে, আজকে আর তার রক্ষা নেই। যেভাবেই হোক জুলেখা তার সাথে আজ খারাপ কাজ করেই ছাড়বেন। তিনি আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে সেখান থেকে পালানোর জন্য শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে এক দৌড় দেন। এদিকে ইউসুফ আঃ যেন পালাতে না পারে সেজন্য জুলেখা তাকে পিছন দিক থেকে টেনে ধরলে তার জামার কিছু অংশ পিছন দিক দিয়ে ছিরে যায়।


আল্লাহর অশেষ রহমতে বন্ধ দরজা তখন খুলে যায়। দরজার বাহিরে আসলে ইউসুফ আঃ ও জুলেখা দুজনেই দেখতে পান জুলেখার স্বামী আজিজ সেখানে রয়েছে। জুলখা তার স্বামীর কাছে ইউসুফের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে ও তার কঠিন শাস্তি দাবী করেন। ইউসুফ আঃ কে তখন কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে বসে ইউসুফ আঃ বারবার যা ঘটেছে সেই সত্য ঘটনা আজিজের নিকট বলতে থাকে। কিন্তু তারা কেউ বিশ্বাস করে না। তারা জুলেখার বক্তব্যকেই চুড়ান্ত বলে ধরে নেয়। তখন আল্লাহর কুদরতে জুলেখার কোন এক আত্মীয়ের ছোট এক কন্যা শিশু (মুখে এখনো ভাল করে স্পষ্ট কথা ফোটেনি) দাবি করেন, যদি ইউসুফ আঃ এর জামা সামনের দিক দিয়ে ছেড়া থাকে তাহলে ইউসুফ আঃ দোষ করেছে, আর যদি জামা পিছনের দিক থেকে ছেড়া থাকে তাহলে জুলেখা নিজেই দোষ করেছে।


জুলেখার স্বামী আজিজ তখন ইউসুফ আঃ এর জামা পিছন দিয়ে ছেড়া দেখতে পেয়ে প্রকৃত সত্যটা বুঝতে পারে। তখন ইউসুফ আঃ কে কারামুক্ত করে দেন আর জুলেখাকে শাস্তির ভয় দেখিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে বলেন। প্রকৃতপক্ষে ইউসুফ আঃ এত সুদর্শন ছিলেন যে, জুলেখার মহলে আসা অন্য নারীরা ইউসুফ আঃ কে দেখে ফল কাটার সময় ফল কাটার পরিবর্তে নিজেদের আঙ্গুল কেটে ফেলেছিল। \


জুলেখা বেগম সাহেবা পরবর্তীতে আবারও ইউসুফ আঃ এর সাথে অনৈতিক কাজ করার জন্য হুমকি দিয়েছিল তাকে । কিন্তু ইউসুফ আঃ সবসময় জুলেখা ও অন্য নারীদের অনৈতিক কাজ থেকে বাচার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়েছিলেন।


জুলেখার এই নোংরা কাহিনিকে কি প্রেম ভালবাসা বলা যায় ? আর যারাই বা বলছেন , তারাই বা কোন বিবেকে বলছেন ? কোন যুক্তিতেই বা একজন নবীর নামে এমন ডাহা মিথ্যা তথ্য যুগের পর যুগ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন । অনেক হয়েছে , আর না। এবার অন্তত থামেন ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url