পদ্মা সেতু যেভাবে নির্মান করা হয়েছে | পদ্মা সেতু ২০২২

পদ্মা সেতু যেভাবে নির্মান করা হয়েছে | পদ্মা সেতু ২০২২

পদ্মা সেতু। দেখতে কতটা মজবুত,কতটা সুন্দর তাই না! কত মানুষের উপকার হচ্ছে এই সেতুর নির্মানের বদৌলতে। গোটা কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যরেখাই যেন বদলে গেছে। বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রার মান, অর্থনৈতিক অবস্থা। 

কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন? পদ্মা নদীর মত এত গভীর, এত প্রশস্ত নদীতে বিশাল আকারের এত মজবুত সেতুটি কিভাবে বানানো হয়েছে ! এই সম্পর্কে একটা বাস্তবিক ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব আজকে। যেটা কিনা পদ্মা সেতুর নির্মানের দায়িত্বে থাকা চায়নার এক প্রকৌশলী তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন।


পদ্মা নদীর পানি থেকে তলদেশ কত নিচে জানেন, 40 মিটার। এটি কিন্তু ফুট না। ফুট হিসাবে এই নদীর তলদেশ পেতে হলে যেতে হবে পানি থেকে প্রায় 131 ফুট নিচে। সাধারণত 10 ফিট করে বিল্ডিং এর একতলার উচ্চতা হয়। সে হিসেবে পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে পানি পৃষ্ঠের উচ্চতা হলো তেরো তলা বিল্ডিং এর সমান। পানির নিচে এই ১৩ তালা ভবন কি শুধু নির্মান করে রাখলেই তো হবে? এগুলো কি স্রোতের টানে ভেসে যাবে না? 


পদ্মা সেতু যেভাবে নির্মান করা হয়েছে | পদ্মা সেতু ২০২২


হা। এটাই পদ্মা নদী। এরকম কয়েক হাজার বিল্ডিংয়ের গিলে ফেলতে এর কোন কষ্ট হবে না। তাহলে এরকম কলামগুলো শুধু বানিয়ে রাখলেই হবে না সে গুলোকে গাততেও হবে। নদীর তলদেশের মাটি হয় নরম। একদম বালির মত। সেখানে যা দিবেন তাই হারিয়ে যাবে। ধারণা করা হয়। সাধারনত ব্রেদ ডগ ৮ কিলোমিটার নিচে থাকে। ৮ কিলোমিটার মানে বুঝেন? প্রায় এভারেস্টের উচ্চতার সমান। অন্যান্য দেশের নদীর তলদেশে ব্রেড ডগ অল্প তলদেশেই পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কপাল এত খারাপ যে, পদ্মার ব্রেড ডগ অনেক গভীরে। তাহলে পদ্মা নদীর ব্রিজের পাইল কতটুকু দিতে হবে।  


বর্ষাকালের যখন অতিরিক্ত স্রোত থাকে এই পদ্মার তলদেশে বালির মত মাটি ধুয়ে চলে যায়। পদ্মা নদীর মাটি ধুয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে 65 মিটার। মানে নদীর নিচ থেকে 65 মিটার মাটি ধুয়ে চলে গেছে। অর্থাৎ 213 ফিট মাটি তলদেশ থেকে সরে গেছে। পদ্মার 21 তলা বিল্ডিং এর সমপরিমাণ মাটি ধুয়ে চলে যাওয়া রেকর্ড পৃথিবীর অন্য কোন দেশের নদীর নেই। এই অবস্থায় পানির নিচে মাটি পেতে হলে 34 তলা উচু বিল্ডিং এর সমান উচ্চতার গভীরে যেতে হবে। 


তাহলে আপনাকে ব্রিজের যে কলামগুলো দিতে হবে সেগুলো 105 মিটার সমান উঁচু হতে হবে। মানে চৌত্রিশ তলা বিল্ডিং এর চেয়ে লম্বা কলাম। সব স্থানের অবস্থা আবার একও না। কোথও মাটি ধুয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেশি। আবার কোথাও কম। আপনি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেন না যে কোথাও কম বা কোথাও বেশি মাটি ধুয়ে যাবে।কিংবা কোথায় মাটি কাটতে হবে। পদ্মাসেতুতে গড়ে 120 মিটার পাইল দেওয়া হয়েছে। এর মানে 40 তলা বিল্ডিং এর সমান উচ্চতার পাইল দেয়া হয়েছে। 


এটাতো গেল পাইলের গভীরতা। এবার আসি পাইলের আকার কেমন হবে সে বিষয়ে। পাইলগুলো গোল, গোল 40 তলা বিল্ডিং এর সমান সিলিন্ডার। সিলিন্ডারের ব্যাস হল 3 মিটার । মানে প্রায় আপনার রুমের ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত। পাইলগুলো বানানো হচ্ছে স্টিলের পাত দিয়ে। পুরো এই পাতগুলোকে পুড়িয়ে সিলিন্ডার বানানো হয়। এই সিলিন্ডার জ্যামিতিক হারে এটাস্ট করা হয়। 1 মিটার লম্বা সিলিন্ডার এর সাথে 1 মিটার লম্বা সিলিন্ডার জোড়া দেওয়া হয়। আবার 2 মিটার লম্বা সিলিন্ডার এর সাথে 2 মিটার লম্বা সিলিন্ডারের জোড়া। এইভাবে একটা সিলিন্ডারের সাথে জোড়া দিয়ে আরেকটা সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। এতে করে লম্বা 21 তলা বিল্ডিং এর সমান হয়। 


আপনার কি মনে হয়? এইসব পাইলগুলো কে নিয়ে যায় তুলে। এ পাইল গুলো তুলে নেয়ার জন্য জার্মান থেকে আনা হয়েছে অত্যাধুনিক হ্যামার। এই পাইলগুলো পুরোটাই ফাপা। পানির নিচে দেওয়ার পর বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যায় পুরোটা পাইল। আবার পাইল গুলোতে জং ও ধরতে পারে। তবে 100 বছরে মাত্র 10 মিটার ক্ষয় হতে পারে। এ তো গেল পাইলের কথা। এবার চলে যাচ্ছি কলম বা  পিলারের কাছে। 


মাকড়সার যেমন আটটি পা থাকে তেমনি পাইলের পিলারগুলো ৬ দিকে বিস্তৃত থাকে। এগুলোকে সোজা থাকে না, বাকা করে বসানো হয়। পাইল বাঁকা করে ঢুকালে এদের ৬ পা গভীরে গিয়ে ঠিকঠাক করে বসতে পারে। আশা করা যায় এই পিলারের ৬ দিকের মাটি একসাথে ধুয়ে যাবে না। এরা বাঁকাভাবে থাকবে। এতে এদের লোড নেওয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। 


আপনার কি মনে হয় এই কাজ এত সহজ? পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকেই অনেক ট্রল কর। পদ্মা আমাদের স্বপ্ন ও আমাদের সাধনার নাম । এ অঞ্চলের মানুষ ছাড়া দেশের অন্য কেঊ হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না। সবকিছু মিলিয়ে একুশ শতকের ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ হল এই পদ্মা সেতুর বস্তবে রুপ দেয়া । এই সেতু যদি নির্মানের ফলে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার যে আরো কত উন্নতি হবে তা আমরা চিন্তাও করতে পারছি না। এছাড়াও বাইরের দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক যোগাযোগ আরো সমৃদ্ধ হবে। 


বন্ধুরা পদ্মা সেতু সম্পর্কে আরো আপনারা যদি এর চেয়েও আরো ভালো বিশ্লেষন জেনে থাকেন। তাহলে কমেন্টস করে জানাবেন । ধন্যবাদ । আল্লাহ হাফেয। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url