সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের ইতিহাস
সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের ইতিহাস
সম্রাট শাজাহান তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী মমতাজ মহল কে এতই ভালবাসতেন যে মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর তার স্মৃতিকে অম্লান করে করাখার জন্য তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন যা আজ বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। কিন্তু আপনি কি জানেন? মমতাজ মহলের মৃত্যু টি ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। 14 তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি দীর্ঘ 30 ঘন্টা প্রসব বেদনা সহ্য করার পর মাত্র ৪০ বছর বয়সে 1631 খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জুন সকালে চির নিদ্রায় শায়িত হন মমতাজ মহল।
আফজার আহমদ, যে মামি মহল এবং তাজমহলের লেখক তিনি তথা আব্দুল আমির সেলাহ, তাদের লিখিত বইয়ে ওই যন্ত্রণাদায়ক সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন সম্রাট শাহজাহান যখন কোন যুদ্ধে যেতেন মমতাজ কে তখন সাথে করে নিয়ে যেতেন এবং মমতাজ ও তাকে একা ছাড়তে চাইতেন না তাই তার সাথেই যেতে যেতেন।
তৎকালীন সময়ে দক্ষিণ ভারতে বুরহানপুরের মুঘল সেনাপতি খান জাহান মোহাম্মদ লোদি আহমদনগরের নিজাম শাহের সাথে মিলিত হয়ে সম্রাট শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিল। লোদীর বিদ্রোহকে দমনের জন্য শাহজাহানকে বোরহানপুর যেতে হয়েছিল। মমতাজ মহল তখন পূর্ন গর্ভবতী থাকা সত্ত্বেও শাহজাহান তাকে আগ্রার গোয়ালিয়র সিরঞ্জস হয়ে বোরহানপুর নিয়ে গিয়েছিল। যা ছিল 787 কিলোমিটারে যাত্রাপথ ।
ভরা গর্ভবতী হয়ে এত সুবিশাল পথে যাত্রা করার কারনে মমতাজ মহল অতিমাত্রায় দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এরপর পরই মমতাজের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় আর ওইদিনই অর্থাৎ 16 ই জুন রাতের দিকে সেই যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায় আর সেই সময়ে সম্রাট শাজাহান বিদ্রোহ দমনের জন্য যুদ্ধের রননীতি তৈরিতে ব্যস্ত ছিল। তার কাছে মমতাজ বেগমের খারাপ অবস্থার খবর গিয়েছিল কিন্তু সে ব্যস্ততার কারনে দেখতে আসেতে পারেন নি। তার বদলে সম্রাট শাহজাহান ধাত্রী অর্থাৎ দায়ীদের পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত মমতাজ মহল যন্ত্রণায় কাতর ছিল। শাহী হাকিম ওয়াজির খান তখন সেখানে উপস্থিত ছিল। যে মমতাজের অন্যান্য সন্তানের প্রসবের সময়ও উপস্থিত থেকে ছিল। অনেক লম্বা সময় ধরে কষ্ট সহ্য করে মমতাজ মহল গৌহর বেগম নামে একজন কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু মমতাজ খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই মেয়েটিকে জন্ম দেওয়ার পরে মমতাজ মহল খুব বেশী পরিমানে কাঁপতে থাকে। দায়ীমা এবং হাকিম তখন মমতাজের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তস্রাব যাওয়া কে কোনভাবেই থামাতে পারছিল না।

মমতাজের ঘর থেকে শাহজাহানের কাছে অনেকবার খবর পৌঁছানো হয়েছিল। কিন্তু শাহজাহান সময় করে উঠতে পারছিলেন না। এরপর শাহজাহান যখন নিজে মমতাজকে দেখতে যেতে চেয়েছিল, সে সময় তার কাছে খবর আসে যে মমতাজ তখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন। তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে। এটা শুনে শাজাহান নিজে ঘুমাতে চলে যায়, কারন সারাদিন তার উপর দিয়েও ধকল কম যায়নি। যম্রাট শাহজাহানের যখন সবেমাত্র ঘুমে চোখ লেগেছে। সেই সময় তার মেয়ে জাহানারা নিজে এসে তাকে মমতাজের কাছে যেতে বলেন।
শাহজাহান হারেমে গিয়ে দেখে মমতাজকে তখন অনেক হাকিমেরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আর মমতাজ তখন মৃত্যুর যন্ত্রনায় ছটফট করছিল। আর শাহজাহানের যাওয়ার সাথে সাথে শাহী হালিম বাদে সবাই সেই ঘর ছেড়ে চলে যান। বাদশাহর গলার আওয়াজ পেয়ে মমতাজ মহল চোখ খোলেন। তার চোখ তখন জলে ভরা। শাজাহান মমতাজ এর পাশে গিয়ে বসে আর এরকম সময়ে মমতাজ শাহজাহানকে দুটি কথা দিতে বলেন। প্রথমটা ছিল শাহজাহান যেনো আর দ্বিতীয়বার বিয়ে না করেন আর দ্বিতীয় টা ছিল তার জন্য এমন একটা সমাধি মারাতে হবে যা আর কেউ কখনও বানায়নি। এর কিছুক্ষণ পরেই সকাল হওয়ার আগেই মমতাজ মহলের মৃত্যু হয়।
মোগল ঐতিহাসিক আব্দুল হামিদ লাহোরী তার বাদশাহনামা বইটিতে উল্লেখ করেন মমতাজের 40 বছর বয়সে মৃত্যু হয়। সেই সময় তাঁর ৮ টা ছেলে এবং ছয়টা মেয়ে ছিল। সাথী যে মমতাজের দেখাশুনা করতেন। আর নিশা দুজনে মিলে মমতাজের শরীরটাকে পাঁচটি সুতির কাপড়ে মুরিয়ে দিয়েছিলেন। মমতাজের মৃত্যুতে শুধু শাহজাহানই নয় পুরো বুরহানপুর এই শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তখন তাপ্তি নদীর তীরে জয়না বাগে মমতাজের সমাধি অস্থায়ীভাবে কবর দেওয়া হয়েছিল । পরবর্তীতে ১৬৩২ সালে মমতাজ মহলের মরদেহ সোনায় মোড়া কফিনে বহন করে এনে আগ্রার যমুনা নদীর তীরে সমাধিস্থ করা হয়, যেখানে আজ তাজমহল দারিয়ে আছ।
তো বন্ধুরা আজকের ইনফর্মেশন টি কেমন হল জানাবেন। আপনার যদি কোন কিছু জানার বা বলার থাকে তাহলে কমেন্টস জানাতে পারেন। আল্লাহ হাফেজ।