তাজমহলের অমিমাংসিত রহস্য
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তাজমহল হল একটি। প্রায় ৪০০ বছর পুরানো এই অকল্পনীয় সৌন্দর্যের জন্য সারা বিশ্ব থেকে প্রায় এক কোটি পর্যটক প্রতিবছর তাজমহল দেখতে আসে। কিন্তু তাজমহলের এই অসম্ভব সৌন্দর্যের পেছনেও লুকিয়ে আছে কিছু লোমহর্ষক রহস্য। তাজমহল নিয়ে বহু অমীমাংসিত রহস্য রয়েছে তার মধ্যে প্রধান প্রধান কয়েকটি আপনাদের জন্য তুলে ধরলাম।
তাজমহল থেকে আগ্রা ফোর্ট পর্যন্ত একটি রহস্যময় সুরঙ্গ রয়েছে। এই দাবি বহুদিনের পুরনো। সম্রাট শাহজাহান যখন জেলে বন্দী ছিলেন তখন তার মেহের সাহায্যে তিনি তাজমহলে আসতেন এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। আবার অনেকেই বলেন শাহজাহান সম্রাট থাকা অবস্থাতেই এই সুরঙ্গপথেই তিনি তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে সময় কাটাতেন। তাজমহলের সৌন্দর্যের পিছনে লুকিয়ে আছে এর স্রষ্টার বলিদান। যিনি এই তাজমহলের নকশা করেন তাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শ্রমিকদের হাত কেটে দেওয়া হয়। এইজন্য তাজমহলের ছাদে একটি বড় অংশ ফাঁকা রয়েছে। শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে নিখুত কারিগরিতে একটু খুদ রেখেদিয়েছিলেন। শাহজাহানের দম্ভ কে প্রতিহত করার জন্য।
তাজমহলের ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় মমতাজের সমাধি। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই সমাধি আসলে নকল। এর নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড রুমে আরো একটি সমাধি রয়েছে। যা লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়েছে। তাজমহল ভালবাসার নিদর্শন হলেও মমতাজ কিন্তু শাহজাহানের দ্বিতীয় পত্নী ছিলেন। এবং এরপরেও বহু বিবাহ করেন শাহজাহান। মমতাজ তার 14 তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান।
তাজমহল প্রায় 400 বছর পুরনো হলেও এর নিচে যে কাঠামো রয়েছে তা আরও আড়াইশো বছর পুরানো। অনেকেই মনে করেন এখানে কোন হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ছিল। তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হয়তো প্রমাণ না পাওয়াযই ভালো। কারণ ভারতবর্ষে একটি বড়সড় দুর্দিন নেমে আসতে পারে এই কারণে।
রহস্য তো বহুদিন ধরেই তারা বাঁধছে। কিন্তু আপনাকে এখন এমন কিছু কথা বলব যা শুনলে আপনি একবার অন্তত তাজমহল দেখতে যাবেন। গিরগিটি যেমন রং বদলায় তার বেঁচে থাকার জন্য, তাজমহল তেমনি রং বদলায়। কিন্তু তা তার অদ্বিতীয়তাকে ধরে রাখার জন্যে। হা ঠিকই শুনেছেন। দিনের আলোয় তাজমহল সাদা দেখালেও সূর্য উদয়ের সময় এর রং থাকে গোলাপি। আর শশুর আর সূর্যাস্তের সময় এর রং হয়ে যায় হালকা লালচে। আর পূর্ণিমার রাতে এর রং হয়ে যায় রুপালি রঙে।
তাজমহলের ফটক দিয়ে আপনি যখন দেখবেন তখন এর যত কাছে যাবেন ততই এটিকে দূরের মনে হবে। আর যত দুরে যাবেন ততো এটাকে কাছে মনে হবে।
প্রায় ৪০০ বছর আগে মোগল সম্রাট শাহজাহান তখনকার দিনে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে এই তাজমহল তৈরি করেন। বর্তমান বাজারের যার মূল্য রয়েছে প্রায় 14 হাজার কোটি টাকা। এই তাজমহল মোগল সাম্রাজ্যের আর্থিক অবনতির জন্য অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।
তাজমহলের এই সৌন্দর্যের জন্য প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক ২৩ বছর ধরে নিরন্তন পরিশ্রম করেছেন। তাজমহলে এমনও কিছু নিদর্শন রয়েছে যা এখনকার দিনে করতে গেলে 3D কাটিং মেশিন ছাড়া অসম্ভব। সম্রাট শাহজাহানের ছেলে আওরঙ্গজেব যদি শাহজাহানকে বন্দি না করতেন তাহলে তাজমহলের মত আরো একটি কালো রঙ্গের তাজমহল দেখার সৌভাগ্য হয়তো আমাদের হতো। শাহজাহান চেয়েছিলেন' তাজমহলের মত আরো একটি কালো রঙের তাজমহল তারই পাশে তৈরি করতে। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি
ব্রিটিশরা শুধুমাত্র ভারতবর্ষকে শাসন করেনি লুটপাটও করেছে। আর তা থেজে বাদ পরেনি বহু মুল্যবান রত্ন। ১৮৮৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজরা বিদেশে চালান দেয় তাজমহলের বহু মুল্যবান রত্ন। ইংরেজরা চলে গেলেও সেই লুটপাট এখনো চলছে। হ্যা ঠিকই শুনেছেন, কিন্তু এই লুটপাট গুলো চালাচ্ছে কিছু নিচু মস্তিস্কের পর্যটকেরা। যারা তাজমহলের দেয়াল থেকে তার কারুকার্য গুলোকে গুজে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
তৎকালীন মানুষের চিন্তা যে কতটা সুদুরপ্রসারী ছিল, তা তাজমহলের চারপাশের গম্বুজগুলোকে দেখলে বুঝা যায়। তাজমহলের বাহিরে চারটি গম্বুজ এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, ভুমিকম্প হলে সেই গম্বুজগুলো বাহিরের দিকে পরবে, তারপরও ভিতরের সৌধকে কোন রকমেই কোন ক্ষতি করবে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, শত বছর পুরনো এই সৌধ প্রকৃতির রসে এখন তার উজ্জলতা হারাচ্ছে। দিল্লির আবহাওয়া এই স্বপ্নের মহলকে কোথাও যেন একটু ফিকে করে দিচ্ছে।
তা আপনি কখনো তজমহলে ঘুরতে গিয়েছিলেন নাকি যাবেন? আমাদের কমেন্টস করে জানান। দেখা হবে পরে লেখাতে। ততদিন ভাল থাকবেন। সবাইকে রাখবেন। আল্লাহ হাফেক্স।
