বাংলাদেশের সেরা পাঁচটি দর্শনীয় স্থান | Top 5 tourist place in Bangladesh
বাংলাদেশের সেরা পাঁচটি দর্শনীয় স্থান
কর্ম ব্যস্ত জীবনে একভহেয়ামি কাটিয়ে কিছুটা প্রশান্তির ছোয়া পেতে আমরা ভ্রমন করে থাকি। তছাড়া ভ্রমন পিপাসুদের কাছে ভ্রমন করাটা যেন নেশার মতই তিব্র। ভ্রমন করার নেশাটা যেন তাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে। আমরা ভ্রমন করি জানতে, ভ্রমন করি আত্তার ক্ষুধা মিটাতে।
আজকে আমরা বাংলাদেশের প্রথম সারির ৫ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করব। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি যদি একবারের জন্যে হলেও এই জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন, তাহলে আপনার কাছে খুবই ভাল লাগবে, আর আপনার মনে এক অজানা, অতৃপ্ত বাসনা জন্মাবে। এই ভেবে যে, আবার কবে এরকম সুযোগ পাব আর এভাবে ঘুরতে যাব। এর আগের পোস্টে আমরা ভ্রমন পিপাসূদের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় ৫ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখানে ক্লিক করে সেই ৫ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন ।
৫.নীলাচল
নীলাচল বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার অন্তর্গত অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বান্দরবান জেলার প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় 6 কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ার পাহাড় চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্র। নীলাচল কে বাংলার দার্জিলিং হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০০৬ সালের ১লা জানুয়ারি এই প্রকল্পের উউদ্ভোদন করা হয়। এ পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে শুভ্রনীলা, ঝুলন্ত নীলা, নীহারিকা এবং ভ্যালেন্টাইন পয়েন্ট নামে উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান।
নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবান এলাকা এক নজরে দেখে নেয়া যায়। মেঘমুক্ত আকাশে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের অপূর্ব দৃশ্য নীলাঞ্চল থেকে পর্যটকেরা উপভোগ করতে পারেন। নীলাচলের বাড়তি আকর্ষণ হলো এখানের নীল রঙের রিসোর্ট। নাম তার নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এই জায়গায় সূর্যাস্তের পর্যন্ত থাকার অনুমতি আছে।
বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য সিএনজি চালিত গাড়ি ও জিপ পাওয়া যায়। নীলাচলে থাকতে চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে তিনটি কটেজের একটি থেকে বেছে নিতে পারেন। তবে নীলাচলে থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। এছাড়া নীলাচল বান্দরবান শহরের কাছে বলে বান্দরবান শহরের রিসোর্ট বা হোটেলগুলোতেও থাকতে পারবেন। বান্দরবানে থাকার জন্য যে সকল হোটেল বা রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে হোটেল হিল ভিউ, হোটেল হিলটন, হোটেল প্লাজা, রিভারভিউ, পর্যটন হোটেল ইত্যাদি অন্যতম।
৪.সাজেক ভ্যালি
সাজেক ভ্যালি বর্তমান সময়ের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাযেক এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম আর পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় 70 কিলোমিটার। দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরত্ব রোয়েছে সাজকের। সাজেক ইউনিয়নের আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গ মাইল। আর এটা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন ।
এখানে সাজেক বিজিপি ক্যাম্প অবস্থিত। সাজেকের বিজিপি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্থিত বিজেপি ক্যাম্প। বিজিবি সদস্যদের সুষ্ঠু পরিকল্পনায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের কারণেই সাজেকের এই ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এখানে পর্যটকদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে ।
সাজেক রুইলুই পাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া এ ৩ টি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্টিত রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট। আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়ে এই কংলাক পাড়া অবস্থিয়। সাজেকে মূলত নুসাই পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে। সাজেকের কলা ও কমলা বেশ বিখ্যাত।
রাগামাটির অনেকটা অংশ দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। তাই সাজেক ভ্যালি কে বলা হয় রাঙ্গামাটির ছাদ। সাজেকের চারপাশে মনোরম সাড়ি সাড়ি পাহাড়, সাদা তুলোর মত ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবে। সাজেক এমনই এক আশ্চর্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রুপ দেখা যায়। কখনো বা খুব গরম অনুভূত হবে, তারপর হয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মতো মেঘ এর পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ি খেলা দেখার জন্য সাজেক একটি আদর্শ জায়গা।
কংলাক পাহাড় সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। আর সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম কংলক পাড়া লুসাই জনগোষ্ঠীর অধ্যুষিত এলাকা । এই কংলক পাড়া থেকেই ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়।
চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দুই ঘণ্টাসময় নিয়ে কংলক ঝরনা দেখে আসতে পারেন। সুন্দর এই ঝর্ণাটি অনেকের কাছেই পিদাম তৈসা ঝরনা বা সিকাম তৈসা ঝরনা নামে পরিচিত।
দিন কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো, সময় গড়ায় তবু সাজেক পুরাতন হয় না। সাজিক গেলে অবশ্যই সকালে যাবেন। ভোরের সময়টা যেন মিস না করেন। মেঘের খেলা আর সূর্যোদয়ের আলোর মেলা একই সময়ে বসে । এজন্য আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপেডে। সেখান থেকে সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায। বিকালে কোন উঁচু জায়গা থেকে দেখলে বিকেলের রঙিন রুপ আপনাকে বিমোহিত করবে। আর সন্ধ্যার পর কোটি কোটি তারার মেলা আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দেবে নিমিষেই। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখতে পাবেন মিল্কিওয়ে আর ছায়াপথও।
ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ ও আদিবাসীদের জীবন যাপন, সহজ-সরল এসব মানুষের সান্নিধ্য আপনার ভালো লাগবে। আর হাতে সময় থাকলে ফেরার পথে ঢু মেরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা, দিঘীনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দিঘিনালা বনবিহার থেকে।
প্রায় সারা বছরই সাজেক যাওয়া যায়।। রাঙ্গামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথেই সাজেক যাওয়া যায়। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে।
সাজেকে থাকার জন্য প্রায় শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। একরাতের জন্য রুম নিতে গেলে রিসোর্ট ভেদে ১৫০০ টাকা ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগবে। ছুটির দিনে যেতে চাইলে মাসখানেক আগে থেকে আপনাকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল, নয়তো ভাল রুম পাবার নিশ্চয়তা কম। কম দামে থাকতে চাইলে আদিবাসী কটেজগুলোতে থাকতে পারেন। সাজেকের প্রায় সব কটেজ থেকেই মোটামুটি সুন্দর ভিউ দেখা যায়।
৩.সুন্দরবন
একঘেয়ামি ক্লান্ত কর্মময় জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন থেকে। প্রায় ৩,৪৫,০০০ একর আয়তনের সুন্দরবনই বৃহত্তম ব-দ্বীপ, দীর্ঘতম লবণাক্ত জলাভূমি এবং জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেম। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন গাড় সবুজের সমারোহ। শুধু সবুজ আর সবুযের মেলা। হরেক রকমের জীবজন্তু , পাখ পাখালি আর কীটপতঙ্গ, বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলে ভেজা লবণাক্ত বাতাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অ্যাডভেঞ্চার ভয় ও শিহরণের স্থান সুন্দরবন। জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। প্রকৃতির অকৃপণ হাতে সৃষ্টি সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিন,সাপ, বানর, মাছ সহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী পর্যটকদের কাছে টানে।
প্রতিবছর নভেম্বর থেকে শুরু হয় সুন্দরবনের পর্যটনের মহা উৎসন। পরিবার-পরিজন নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনে। এখানে সময় কাটাতে পারেন হরিণ দেখে ,বাঘ খুজে, বানর ও কুমিরের সঙ্গে লুকোচুরি করে। কিংবা নির্জন বনের সি বিচে গোসল করে সাঁতার কেটে । ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলার সুযোগও রয়েছে এখানে। বিশেষ করে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার চিত্রা হরিণ ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রানীর দর্শন এখানে সহজলভ্য। জেলে বাওয়ালি মৌয়ালীদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ পেতে পারেন অনায়াসেই।
রাতে সুন্দরবনের শান্ত-স্নিগ্ধ রূপ আর নদী-সমুদ্রের সৌন্দর্য অপরূপ। এসব ছাড়াও সুন্দরবনের আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন ও আকর্ষণীয় স্থান। মনে চাইলে দেখতে পারেন। সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল, হারবাড়িয়স, কটকা, কটকা বীচ, জামতলা সৈকত, মান্দারবাড়িয়া সৈকত, হীরন পয়েন্ট, দুবলার চর ইত্যাদি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।
খুলনার মংলা থেকে মাত্র ১ থেকে দেড় ঘন্টায় যাওয়া যায় সুন্দরবনের করমজলে। এখানে বন বিভাগের কুমির প্রজনন খামার ও মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। কচিখালি তে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য্যের হাতছানি । ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য কচিখালি হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এরপর কটকা হিরো পয়েন্ট। এই দুটি পয়েন্টেই মংলা থেকে ট্রলারে করে পৌঁছাতে 12 থেকে 14 ঘণ্টা সময় লাগে। বনের কটকাতে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারে উঠে এক নজরে দেখে নেওয়া যায় অপূর্বসুন্দর সুন্দরবনকে । এর চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে পৌঁছানো যায় দুবলার চর আলার কোল। আলার কোল পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। এখান থেকে সূর্য উদয়ের ও অস্তের দৃশ্য দেখার জন্য ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমায় । এ যেন পানির ভেতর থেকে সূর্য উঠে আসে আবার টুপ করে ডুবে যায়। দুবলার চরে গেলে দেখা যাবে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অস্থায়ী জেলে পল্লী। হাজার হাজার জেলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন এইচরে।
১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেন।
নদীপথে খুলনা লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ যোগে সুন্দরবন যাওয়া যাবে। রাতে ও সকালে খুলনা থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায় সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে । সড়কপথে খুলনা থেকে বাসযোগে কয়রা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়। খুলনায় থাকা-খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল রয়েছে। বাগেরহাট থাকতে চাইলে বাগেরহাট সদরে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল।
২.কক্সবাজার
কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, মৎস্য বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১৫০ কি.মি পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন।
কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হয়েছে সেগুলোতেও ঘুরে দেখতে পারেন। কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবনি পয়েন্ট, দরিয়ানগর সৈকত, ইনানী সৈকত এবং টেকনাফ সৈকত।
কক্সবাজার বেড়াতে গেলে শুধু সমুদ্র সৈকতেই নয় ঘুরে দেখবেন আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। আপনার সুবিধা অনুযায়ী আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। কক্সবাজারের আশেপাশে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হিমছড়ি, ইনানী সমুদ্র সৈকত, মহেশখালী, রামু বৌদ্ধ মন্দির, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি।
এই কক্সবাজারে অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন প্রভৃতি।
কক্সবাজারে আপনি বছরের যেকোনো সময় যেতে পারবেন। কিন্তু শীতকালে গেলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক রেল ও আকাশ পথে যাওয়া যায়। কক্সবাজারে পর্যাপ্ত হোটেল রয়েছে থাকার জন্য। সাধারণত দাম অনুসারে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল রিপোর্টগুলো কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। মার্মেইড বিচ রিচোর্ট, সায়মন বিচ রিচোর্ট, ওশান প্যারাডাইজ, লং বিচ, কক্স টুডে, সি প্যালেস, বিচ ভিউ, হোটেল সি ক্রাউন, ইটোল রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিচোর্ট, অভিসার, কল্লোল, ইত্যাদি। এসব হোটেল-রিসোর্ট সাধারণত অগ্রিম বুকিং করতে হয।
১. সেন্ট মার্টিন
দেশের ভ্রমণপিপাসুদের নিকট পরম আরাধ্য একটি পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। যা নারিকেল-জিন্জিরা হিসেবেও পরিচিত। বর্তমানে দারুচিনির দ্বীপ নামেও এর পরিচিতি বাড়ছে । এর চতুর্পাশের সাগর আর আকাশের নীল মিলেমিশে একাকার । সারি সারি নারিকেল গাছ, কেয়া বন আর সাগরতলা মায়াময় স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় নিমিষেই। ভাটায় জেগে ওঠা নান্দনিক প্রবাল প্রাচীর, ঝাকে ঝাকে উড়ে চলা গাংচিল, পশ্চিম বিচ থেকে দেখা যায় সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য। সৈকতে বসে নরম কোমল স্নিগ্ধ বাতাসে গা জুড়িয়ে নেয়া যায়। অগভীর সাগরে স্বচ্ছ নীল জলে দলবেঁধে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার লোভে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে প্রায় ১ মিলিয়ন পর্যটক পদচিহ্ন আকে এই স্বপ্নের দারুচিনি দ্বীপ।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং মায়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত এই দ্বীপ।
বিখ্যাত লেখক ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবির কারনে এই দ্বীপের পরিচিতি আরো বেড়ে যায়।
ভৌগোলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত । উত্তর অংশকে বলা হয় নারিকেল জিঞ্জিরা বা উত্তরপাড়া । দক্ষিণাঞ্চলের অংশকে বলা হয় দক্ষিণপাড়া এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত একটি সংকীর্ণ বিচের মত এলাকা। এই সংকীর্ণ এলাকাটি গলাচিপা নামে পরিচিত। দ্বীপের দক্ষিনে 100 থেকে 500 বর্গ মিটারের আয়তনের একটি ছোট দ্বীপ আছে। যা স্থানীয়ভাবে ছেঁড়া দ্বীপ নামে পরিচিত । এটা একটি জনশূন্য দ্বীপ। ভাটার সময় এই দ্বীপে হেঁটে যাওয়া যায। তবে জোয়ারের সময় নৌকার প্রয়োজন হয় । দীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫ টি করে লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করে। সেন্টমার্টিনদ্বীপে বেশ কয়েকটি ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে একটি সরকারি ডাক বাংলোও আছে। সেন্টমার্টিনদ্বীপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভাল।
এই হলো আমাদের লিস্টে থাকা বাংলাদেশের ৫ টি প্রথম সারির পর্যটিন স্থল। আমাদের লিস্টে আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের নাম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নিকলী হাওর। আপনি চাইলে সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। তবে নিকলী হাওর সম্পর্কে আজকে কোন আলোচনা করব না। আপনার কমেন্টস করে জানাবেন যদি নিকলী হাওর সম্পর্কে জানতে চান।
আজকে যে জায়গা গুলোর কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে কোন কোন জায়গা গুলো আপনি ঘুরে এসেছেন কিংবা কোন জায়গা গুলো আপনার বেশি ভাল লেগেছে তাই ঘুরতে যাবেন ভাবছেন। তাআমাদের কমেন্টস করে জানান। আমার কাছে কিন্তু নীলাচল কে সবচেয়ে বেশী ভাল লেগেছে। তাই সুযোগ পেলে আবারো যাব ইনশাআল্লাহ। ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না। দেখা হবে হবে পরের কোন ভিডিও তে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন, আশেপাশের সবাইকে ভাল রাখবেন। আল্লাহ হাফেয।