পদ্মা সেতুর যে বড় ভুলে ভুগতে হবে ১০০ বছর

২৫শে জুন ২০২২। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দুই বাংলার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। আর এর  ফলে দক্ষিণবঙ্গের 21 টি জেলা সরাসরি যুক্ত হয়েছে ঢাকার সাথে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার হয়েছে অবসান। এই পদ্মা সেতু কে ঘিরে দেশে বিদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে।  পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। সকল ষড়যন্ত্র কে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সকল প্রতিকূল পরিবেশ ও নির্মাণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুর বাস্তবে রুপ দেওয়া ছিল অনেকটা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই ট্রাজেডি।
 
এই পদ্মা সেতুর কে বলা হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ঘুরে দাঁড়ানোর মূল নিয়ামক। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনা হল পদ্মা সেতু। তবে কথায় আছে, চাঁদেরও নাকি খুঁত আছে। ঠিক তেমনি আমাদের পদ্মাসেতু প্রকৌশলগত বিষয় হলেও এই সেতুরও বড় একটি খুঁত রয়ে গেছে। আর তা হলো এই সেতুর রেল পথ। এ পদ্মা সেতুর রেল পথে আরো কিছুটা ভিন্নতা আনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই পদ্মা সেতুর ভুলে ভুগতে হবে ১০০ বছর।

পদ্মা সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয়েছে ১০০ বছর। বাংলাদেশের সক্ষমতার অনন্য প্রতীকে পরিণত হওয়া এই সেতুর রেলপথ সিঙ্গেল লাইনের। ১০০ বছর স্থায়িত্বের বহুমুখী সেতু টিতে রেলপথটি ডাবল লাইন এ উন্নীত করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে একটি ট্রেন যখন পদ্মা সেতু পার হবে, তখন বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেনকে অপেক্ষায় থাকতে হবে ব্রীজে ওঠার জন্য। পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ২০০৩ সালের ১৬ ই মে শুরু হয়ে ২০০৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হয়। সমীক্ষাইয় রেল লাইন যুক্ত রাখার সুবিধা সহ ২৫ মিটার প্রশস্ত সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল । কিন্তু ২০০৭ সালে প্রকল্প অনুমোদনের সময় সেতুতে রেল যুক্ত করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেল লাইন যুক্ত করার নির্দেশ দেন।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর এক পাশে রয়েছে সিঙ্গেল লাইনে রেলপথ। আর তাই এই সেতু দিয়ে দিনে 24 টির বেশি ট্রেন চলাচল করতে পারে না। যমুনা সেতুতে ফাটল তৈরি হবার কারণে সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন চে ঘন্টায় মাত্র 20 কিলোমিটার গতিতে। যমুনা সেতুর নকশার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে 2009 সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।  যার নিচতলায় ট্রেন এবং উপরতলায় গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু তারপরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নকশা থেকে বাদ দেয়া হয় আর তা হলো ডাবল রেললাইন।
২০০৭ সালে অনুমোদনের সময় পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১০১৬২ কোটি টাকা।  ২০১১ সালে রেল  লাইনের সুবিধা যুক্ত করে এর ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ১০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

রেলওয়ে প্রস্তাব ছিল সেতুতে ডাবল লাইনের ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করার। কিন্তু নির্মাণ খরচ কমানোর জন্য পদ্মা সেতুর নিচতলায় সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েলগেজ রেলপথ বসানোর পরিকল্পনা করা হয়।

পদ্মা সেতুতে ডাবল স্টেক কন্টেইনারবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটারগতিতে। পণ্যবাহী ট্রেন ১২৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। ডুয়েল গেজ রেললাইন এর কারণে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ উভয় ধরনের ট্রেনই চলতে পারবে।  এত সুবিধা থাকলেও সিঙ্গেল লাইনের রেল লাইন তৈরীর কারণে যমুনা পদ্মা সেতুতেও সেতুর মতো সমস্যা হবে।

যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল এর সমস্যা সমাধানেরঅ জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে যমুনা নদীতে আরেকটি বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মা নদীর ক্ষেত্রে আরেকটি রেলসেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। বহু অর্থ খরচ করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যশোর রেলপথ নির্মিত হচ্ছে ভবিষ্যতে এ পথে ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
 
পদ্মা রেল সংযোগ এবং খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলার সঙ্গে রেলপথে ঢাকা সরাসরি যুক্ত হবে । পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে তখন পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল অনেক বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে যমুনা সেতুর মতো পদ্মা সেতুতে একটি ট্রেন পারাপারের সময় সেতুর অপর প্রান্তে আরেকটি ট্রেনকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।

পদ্মা সেতুর নিচতলায় বা লেয়ারডেকে ডুয়েল গেজ রেললাইন বসানো হবে। যার প্রশস্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। রেললাইন ছাড়াও এখানে থাকবে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপ। এছাড়া রেললাইনের দুই পাশে সেতুর সার্ভিস ওয়াকওয়ে রয়েছে। সে কারণে সেতুর নিচতলায় আর তেমন কোনো জায়গা নেই।  সেজন্য পদ্মা সেতুর রেলপথকে ডাবল লাইনের উন্নীত করার কোনো সুযোগ নেই। পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন কর্মকর্তার বরাতে জানা যায় নকশা অনুযায়ী পদ্মা সেতু যে পরিমাণ ভার বহন করতে পারবে তাতেও ডাবল লাইনের সুযোগ রাখা হয়নি। সেতুর নির্মাণব্যয় কমাতেই সিঙ্গেল রেললাইনের নকশা করা হয়েছে।

রেল সংযোগ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা বলেছেন পদ্মা সেতুতে ডাবল রেললাইন করা হলে বড়জোর 5 হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়তো কিন্তু সে ক্ষেত্রে রেল চলাচলের ১০০ বছরের সুবিধা পাওয়া যেত। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন বাংলাদেশের বিখ্যাত রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ১০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। এত পুরনো ডাবল লাইনের রেল সেতু এখনো নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যাচ্ছে।
বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুতে বর্তমান এ সাধারন যানবাহন চলাচল করলেও এই সেতুর রেল লাইনের কাজ শেষ হতে আরো বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তারপরও বা কম কিসে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ। এই সেতুর বরাতে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি হোক এই প্রত্যাশা রেখে আজকের ভিডিওটি শেষ করছি। বন্ধুরা পদ্মা সেতুর রেলপথ সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত দেওয়ার থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ
 
 
অনেকেই পদ্মা সেতু  সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে নিচের বাক্যগুলো লিখে সার্চ করে থাকেন।

বাক্যগুলো হলঃ পদ্মা সেতু টোল,পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু,পদ্মা সেতু ছবি,পদ্মা সেতুর বাজেট ২০২২,পদ্মা সেতু উদ্বোধন,পদ্মা সেতু আপডেট,পদ্মা সেতু a to z,পদ্মা সেতু কয়টি জেলাকে সংযুক্ত করবে,পদ্মা সেতু অনুচ্ছেদ,পদ্মা সেতুর খরচ কত,পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত,পদ্মা সেতু টোল রেট,পদ্মা সেতু a to z pdf download,পদ্মা সেতু স্প্যান সংখ্যা,পদ্মা সেতু ছবি,পদ্মা সেতু বাঁকা কেন?,পদ্মা সেতু বিসিএস,স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে ১০টি বাক্য ইত্যাদি।
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url